Thursday, July 30, 2020

|| অনুবাদ সংখ্যা || অভিজিৎ পাল চৌধুরী ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| 
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||












টমাস ট্রান্সট্রোমার (১৯৩১ - ২০১৫) কবিতা : অনুবাদ~অভিজিৎ পাল চৌধুরী

টমাস ট্রান্সট্রোমার সুইডেন-এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কবি । পোস্টমর্ডানিজমকে অতিক্রম করে এক নিজস্ব শৈলী তৈরী করেছেন ।সুইডেনে তাকে "ঈগল কবি" বলা হয় কারণ তার কবিতায় এক রহস্যময় দৃষ্টিকোণ নিয়ে একটা উচ্চতা থেকে দেখা পৃথিবীকে পাওয়া যায় অথচ তার নখদর্পণে উঠে আসে প্রাকৃতিক পৃথিবীর প্রতিটি খুঁটিনাটি । তার কবিতা যেন এক সীমান্ত অভিযান - নিদ্রা ও জাগরণের, চেতনা ও অবচেতনার । পেশায় মনস্তত্ত্ববিদ এই কবি ২০১১ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী হন।তার লেখা For living and dead series (1989) কবিতার মূল ইংরেজি অনুবাদ থেকে কয়েকটির বাঙলা রূপান্তর এখানে দেওয়া হল ।

সাংহাইয়ের রাস্তাগুলি____

মূল কবিতা : Streets in Shanghai [ For living and dead series (1989) -এর অন্তর্গত  ]

১.

পার্কে সাদা প্রজাপতি অনেকে অবলোকন করে 
আমি ভালবাসি সেই বাঁধাকপির মতো শাদা,
যেন সে নিজেই সত্যের একটি উড়ন্ত কোনা

ভোরের বেলায় মানুষের ভিড় আমাদের নিস্তব্ধ গ্রহটিকে তাদের দৌড় দিয়ে নড়িয়ে দেয় ।
পার্কটি মানুষ ভরে যায় । প্রত্যেকের আটটা মুখ জেড্-পাথরের মত পালিশ করা, 
প্রতিটি পরিস্থিতিতে ভুল এড়ানোর জন্যে ।

প্রত্যেকের, এছাড়াও, অদৃশ্য মুখ 
যাতে প্রতিবিম্বিত 'এমন কিছু যা কেউ বলে না' 
এমন কিছু যা অবসন্ন মুহূর্তে ফিরে আসে এবং অত্যন্ত তিক্ত, যেন এক মুখ ভর্তি  অ্যাডের-ব্র্যান্ডি তার দীর্ঘায়িত শুকনো লেগে থাকা স্বাদের মতো

পোনামাছ গুলো পুকুরে অবিরাম নড়ে চড়ে বেড়ায়,  সাঁতরায় যখন তারা ঘুমোয়,
তারা বিশ্বস্ততার আদর্শ প্রতীক : সর্বদা গতিশীল ।

২.

এখন মধ্যাহ্ন । ঝাঁকে ঝাঁকে আসা সাইক্লিস্টদের ওপর দিয়ে বয়ে চলা ধূসর সমুদ্র বাতাসে 
ধোওয়া কাপড় ওড়ে পতপত করে ।
বাঁ দিকে ডান দিকে গোলকধাঁধা গুলি মনে রেখো 

আমাকে ঘিরে আছে লিখিত চিহ্নগুলি 
যা আমি বুঝতে পারিনা, আমি পুরো অশিক্ষিত 
কিন্তু আমি দাম দিয়েছি যা আমার ন্যায্য এবং তার প্রতিটির জন্য রশিদ আছে 
আমি নিজের সম্পর্কে এতো অপাঠ্য রশিদ জমিয়েছি ;

আমি একটি বুড়ো গাছ যার শুকনো পাতা 
ঝুলে আছে এবং মাটিতে পড়ছে না 

এবং সমুদ্রের দমকা হাওয়া 
সেইসব রশিদ গুলোকে মর্মরিত করছে ।

৩.

ভোর বেলায় জনতার ভিড় আমাদের নিস্তব্ধ গ্রহটিকে নড়িয়ে দেয় ; 
আমরা সবাই রাস্তায় উঠে পড়ি 
জাহাজের ডেকের মত ভর্তি হয়ে যায় 
আমরা কোথায় যাচ্ছি ? 
সেখানে যথেষ্ট চায়ের পেয়ালা মজুত আছে ? 
এই রাস্তায় উঠে পড়ার জন্য নিজেদের ভাগ্যবান মনে করি । 
এটা ক্লস্ট্রোফোবিয়া জন্মের হাজার বছর আগে ।

যারা এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে 
তাদের প্রত্যেকের পেছনে একটা ক্রস ভেসে বেড়ায়, নাগাল পেতে চায়, পেরোতে চায়, 
মিলিত হতে চায় ,
এমন কিছু যা আমাদের অলক্ষ্যে পেছনে আসে এবং চোখ টিপে ধরে এবং ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে "বলো তো কে ?"

বাইরে রোদে আমাদের সুখী দেখায় 
যখন ভয়ানক রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেই সব ক্ষত থেকে যা আমরা নিজেরাই জানিনা ।


ইউরোপের গভীরে____ 
মূল কবিতা : Deep in Europe [ For living and dead series (1989) -এর অন্তর্গত  ]

দুটো লক-গেটের মাঝে আমি একটা কালো নৌকা-শরীর ভাসছি 
হোটেল শয্যায় শুয়ে আছি যখন আমাকে ঘিরে নগর জেগে উঠছে 
নীরব কোলাহল এবং ধূসর আলোর প্রবাহ 
নেমে আসে এবং ধীরে তুলে দেয় আমাকে 
পরের তলটিতে : সকাল 

দিগন্ত শোনা যায় । তারা বলতে চায় কিছু, মৃতরা। 
তারা ধূমপান করে কিন্তু খায় না,
তারা শ্বাস নেয় না কিন্তু তবু তাদের 
কণ্ঠস্বর শোনা যায় ।
আমি তাদের একজনের মতো 
রাস্তাগুলো দ্রুত পেরোবো ।

তমসাবৃত ক্যাথিড্রালটি, 
আস্ত একটা চাঁদের মতো ভারী 
ভাটা এবং প্রবাহ ঘটায় ।


বেস্যুজ ( ঘুম পাড়ানিয়া গান )____
মূল কবিতা : Berceuse [ For living and dead series (1989) -এর অন্তর্গত  ]


ইঞ্জিন এবং রাবার এবং এসফল্ট -এর অনিঃশেষ গর্জনের আবহে আমি শায়িত এক মমি 
অরণ্যের নীল কফিনে 

দিনমানে যা কিছু ঘটে তা ডুবে যায়, 
হোমওয়ার্কটি জীবনের চেয়ে ভারী 

এক চাকায় ঠেলাটি এগিয়ে গেল 
এবং আমি আমার ঘূর্ণি মনে নিজে ঘুরলাম 
কিন্তু এখন আমার ভাবনার ঘোরা বন্ধ 
এবং ঠেলাটির ডানা গজিয়েছে 

পরিশেষে মহাকাশ যখন অন্ধকার,
একটি বিমান আসবে । যাত্রীরা দেখবে 
গথিক সোনার মত ঝলমলে নগরীগুলো 
তাদের নিচে ।


Monday, July 20, 2020

|| মুরারি সিংহ-এর কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| 
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||













মুরারি সিংহ


এক এক্কে এক____

এক এক্কে এক, ধারাপাতের সব চেয়ে সহজ নামতা
জীবনের পাঠে সব চেয়ে অসম্ভবও যেন 

এদিক থেকে একজন টানছে তো
ওদিক থেকে আরেকজন

অহরহ ছেঁড়া হচ্ছি, অহরহ খোঁড়া হচ্ছি

ফুটো পকেট থেকে গড়িয়ে পড়ছি কঠিন রাজপথে
              খুচরো পয়সার মতোঝনঝন

পিংপং-বলের মতো
একবার এর কোর্টে ,একবার ওর কোর্টে ,
পিটুনি খাচ্ছি, ছুটোছুটি  করছি

ফি-দিন
একই দৃশ্যের রিপিট টেলিকাস্ট

চা-দোকানে জমে ওঠা আড্ডার পাশ দিয়ে
বয়ে যাওয়া মিছিমিছি জীবনের স্রোত
মিছিমিছি অথবা হিজিবিজি

কত সব খুচরো দরকার
                তাই মেটাতে গিয়ে
খানিকটা এ-দলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছি
খানিকটা ও-দলের মিছিলে পা মেলাচ্ছি

নিজেকে কখনোই এক-এক্কে-এক রাখতে পারছি না

চারপাশে এত মারকাটারি কচু-ঘেঁচুর ভিড়ে
আমার রক্ত-মাংস, আমার রূপ-রস-গন্ধ
এক ঘুনধরাঅমীমাংসিত হয়েই মাইলের পর মাইল রাস্তা ঠ্যাঙাচ্ছে

হাতের বিমূর্তএকতারাটাও, বেজে চলেছে তুমুল বেসুরে

|| পিনাকীরঞ্জন সামন্ত-এর কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||













পিনাকীরঞ্জন সামন্ত


শূন্যতার রং____

যে ট্রেনটি শব্দ করে দ্রুত বেরিয়ে গেল তাকে ডাকতেই চন্দ্রপ্রভা দ্যুতির আড়ালে একমুঠো রোদ্দুর, মুহূর্তেই মনে হলো 
এই জিন্স সভ্যতার যুগে ছন্দহীন মার্কসীয় বাইবেল হাতে নিয়ে এ কেমন কবিতা লিখছি 
যার অবয়বে 
হেসে উঠছে আমার প্রিফিক্সড কৌতুহল ।

সামনেই দেখি পঁচিশ কেজি ওজনের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হেঁটে আসছে এক অবোধ শিশু 
আর একটি বৃক্ষ ক্রমাগত তাকে ইশারা করে বলছে - 
ও শিশু, 
ও মাই ডিয়ার লাভলি শিশু  
তুমি আরো আরো বড় হও । 

আর আমি 
তৎক্ষণাৎ ভাবতে শুরু করেছি - কেন যে এতোদিন ইংলিশটা ভালো করে শিখিনি । কেন যে এতোদিন ইয়োরোপিয়ান সভ্যতার চিমটিকাটা ভাব সমুদ্রে মেলাতে পারিনি নিজেকে - আর কেনই বা দৌড়ে যাইনি
ঐ শেক্সপিয়ার মিলটন ইয়েটসের ..….

আর এসব ভাবতেই
আমার ঐ ছন্দহীন মার্কসীয় বাইবেল এবং মনের যাবতীয় কৌতুহল - পাখিদের রঙ মেখে 
আমাকে টা টা বাই বাই করে 
আকাশ হয়ে ক্রমশ নীল থেকে নীল সমুদ্র

এবং অবশেষে - আমি একটি সিগারেটের 
জ্বলন্ত হারমোনিয়াম বাজালাম ।

|| নাসের হোসেন-এর কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| 
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||

|| আজকের সংখ্যা কবি নাসের হোসেন কে উৎসর্গ করা হোলো। আপনাকে শ্রদ্ধা জানালাম নাসের জ্যেঠু। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন ||













নাসের হোসেন


মাথা_____

এ যে এক অদ্ভুত মানুষ, মাথায় গণেশ পাইনের
আঁকা পাথরের মতো স্ফটিকাকার পাগড়ি,কণ্ঠ থেকে
পায়ের নীচ পর্যন্ত রঙিন ছোপ- দেওয়া ঢোলা
পোশাক,দু- হাত দু- দিকে মেলে যেন- বা দুলে-দুলে
নাচছে,বাতাসের হিল্লোল তার সমগ্র পোশাকে
খেলা করছে, তার পশ্চাদপট ধূসর এবং অনন্তজ্ঞাপক, 
পায়ের সাদারঙের আঢাকা জুতো এক্ষুনি কোথাও  
চলে যাবার কথা বলছে,কিন্তু নাচ থামতে পারছে না। 

|| সুশীল হাটুই-এর কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| 
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||













সুশীল হাটুই

পিংপং বলের তাতা থইথই____

পিংপং বলটি মাৎসর্যের দিকে ভেসে
চলেছে, এখন সে ব্যাকহ্যান্ড খেলবে না
ফোরহ্যান্ড তা নিয়ে ১টা রহস্য
উপন্যাস লেখা যেতে পারে,

পৃথিবীর গঠন পিংপং বলের
গঠনতন্ত্রের জেরক্স, কিন্তু আয়তন বিষয়ে কথা
বললে ৬৪ জি বি মেমোরি লাশ হয়ে যাবে,

পিংপং বলের স্বপ্ন মনখারাপ নিদ্রাহীনতা
অথবা নৃত্যকলা বিষয়ে দিগগজ শিমুলতুলো
কিছুই জানে না,

এর কারণ হতে পারে, কর্কটক্রান্তি রেখা
বিষুবরেখাকে ৭/৪, ৫/২, এবং ৬/৩ বিষয়ে
যে রিপোর্টাজ দেয় তা অন্তঃসারহীন
বুদবুদ,

এ-সবের বাইরে যখনই চৌকো টেবিলে
সাদা পিংপং বলটি নাচতে শুরু করে, তখনই
মগজের সুহানা কোষে,

ঘুমন্ত বরফে আগুন জ্বলে ওঠে...