Monday, March 16, 2020

এবার আমরা শুনবো আপনার কথা, আপনার কবিতা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ।
এবার আমরা শুনবো আপনার কথা।আপনার কবিতা। 
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
কবি হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সকলের খুব চেনা মুখ এবং চেনা মানুষ। ৩০-৩২ বছরের কবিতা যাপন। মানুষটি খুবই সহনশীল, ধীর এবং স্থীর প্রকৃতিগ্রস্থ। ছায়াবৃত্ত নামে আমাদের অতি পরিচিত সাহিত্য পত্র (প্রিন্ট), যার সম্পাদক এই মানুষটি। প্রায় ৩৫ বছর ধরে গৃহশিক্ষকতা এনার প্রধান পেশা। 













নমস্কার হরিৎ দা।
--- এসো অভিজিৎ।
কেমন আছেন?
--- ভালো আছি ভাই। 
--- একদম দাদা, খুব ভালো আছি।

আমি সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিনের সম্পাদক অভিজিৎ দাসকর্মকার। " এবার আমরা শুনবো আপনার কথা, আপনার কবিতা "---- এই বিষয়টি নতুন সংযোজন করেছি। আপনার সাথে কিছু কথা বলবো। আমরা পৌঁছে দেবো সকল পাঠকের কাছে।

১)  দাদা আপনি কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন?  আপনি কোন পেশার সাথে যুক্ত ? 

----- সাহিত্য নিয়েই আমার পড়াশোনা। সাহিত্য নিয়েই আমার পথচলা। সাহিত্যই আমার সবকিছু। আমি কোনো চাকরি করি না। মানে দশটা পাঁচটার ডিউটি আর কি। ওটা আমার জন্যে নয়। এটা আমি প্রথম থেকেই জানতাম। অত বাধ্য আমি নই। তবে পড়াতে খুব ভালো লাগতো। তাই গৃহশিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে নিলাম। তা প্রায় ত্রিশ বছর হয়ে গেল।

২) কীভাবে কবিতায় এলেন?

----- খুব ছোটবেলা থেকেই আমি খুব একা। তার মানে কিন্তু এমন নয় যে, আমি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারতাম না বা কারও সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করতাম না বা আমার কোনো বন্ধু ছিল না। এর কোনোটাই আমার ক্ষেত্রে সত্যি নয়। আমি খেলাধুলা পছন্দ করতাম। আমার বন্ধুও অনেক ছিল। কিন্তু তবুও কোথাও যেন আমি একা। যেমন ধরো, সকলের সঙ্গে মাঠে খেলছি কিন্তু একটা সময়ের পর আমার আর খেলতে ইচ্ছা করত না। হয়ত বাধ্য হয়ে খেলছি কিন্তু খেলার মধ্যে আমি নেই। এমনও অনেক দিন গেছে আমি মাঠে না খেলে কোনো গাছের তলায় একা একা চুপচাপ বসে আছি ঘন্টার পর ঘন্টা। তখন আমি খুব জোর সিক্স কি সেভেনে পড়ি। 

৩) আপনি কবে থেকে কবিতা লিখছেন বা সাহিত্যের সাথে যুক্ত?

----- সাল তারিখ নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারব না। তবে খুব ছোটবেলা থেকে, তখন আমি ফোর কি ফাইভে পড়ি, আমি লাইন মিলিয়ে মিলিয়ে ছড়া লিখতাম। এরপর থেকে যত বয়স বেড়েছে ততই লেখার সঙ্গে আরও গভীরভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছি। 

৪) আপনার প্রথম লেখা বা কবিতার কী নাম, কোন পত্রিকায় প্রকাশিত?

----- আমার কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় আমাদের স্কুলের ম্যাগাজিনে। সে এক ইতিহাস। তখন প্রতি বছর স্কুলম্যাগাজিন বের হত। পুজোর ছুটি পড়ার ঠিক আগের দিন আমাদের হাতে এসে পৌঁছে যেত। এখন তো সেসব পাঠ চুকে গেছে। আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি। একটি মেয়েকে আমার খুব ভালো লাগতো। তার নাম ছিল কেয়া। আমি কেয়া ফুলকে নিয়ে একটি কবিতা লিখলাম। আমাদের পত্রিকার সম্পাদকদের একজন ছিলেন প্রশান্ত স্যার। একমাত্র ওই স্যারের সঙ্গে আমি খুব সহজভাবে কথা বলতে পারতাম। আমি তাকে আমার উদ্দেশ্যের কথা জানালাম। স্যার সম্মতি দিলেন। আমি লেখা জমা দিলাম। পত্রিকা প্রকাশের দিন হই হই ব্যাপার। সবাই বুঝতে পারল এই ফুলের আড়ালে আছে একটি রক্ত মাংসের মেয়ে। একটা গ্রামের স্কুলের ম্যাগাজিনে প্রেমের কবিতা প্রকাশ বিশেষত আশির দশকে, রীতিমতো সাহস লাগত। আমি সেটা পেরেছিলাম। এক অর্থে আমি স্কুলম্যাগাজিনকে রাতারাতি সাবালক করে দিয়েছিলাম।

৫) যদি কবিতা বা সাহিত্যে না থাকতেন তবে আপনি কোন বিষয় নিয়ে থাকতেন?

----- সাহিত্য করা ছাড়াও আমি ছাত্র পড়াই। এটাই আমাকে ভাত দেয় অর্থাৎ পেটের খিদে মেটায়। তবে সাহিত্য আছে বলেই এটা পারি। কারণ আমি বাংলা পড়াই। তাই সাহিত্য না থাকলে আমি হয়ত মরেই যেতাম। তবে এর পাশাপাশি আমার একটা স্বপ্ন আছে, একটা নির্জন স্টেশন আর তার পাশে আমার একটা চায়ের দোকান থাকবে। খুব বেশি বিক্রির দরকার নেই। কারণ তাহলে তো সবসময়ই হই চই লেগে থাকবে। সেটা তো আমার আবার পছন্দ হবে না। তাই মোটামুটি একটা পেট চলে যাবে এরকম একটু আধটু বেচাকেনা হোক। কিন্তু দিনের শেষে বাড়ি ফিরে আমি কিন্তু কবিতা পড়ব। এই স্বপ্ন আমি এখনও দেখি।

৬) আপনার কবিতা জীবনে কার অবদান সবথেকে বেশি? 

----- বাড়ির মানুষজনদের কথা যদি বলো তাহলে বলবো, বাবা চাইতো আমি লেখক হই। আর কবিদের কথা যদি বলতে হয় তাহলে বলবো, আমার জীবনে গুরু বলে কেউ নেই। কবিতা জীবনের একেবারে শুরু থেকেই সুভাষ মুখোপাধ্যায়, অরুণ মিত্র, প্রণবেন্দু দাসগুপ্ত, নবারুণ ভট্টাচার্যের কবিতা পড়েছি। এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। বিশেষ কোনো কবির অবদান আমার কবিতা জীবনে নেই।

৭) আপনার কাছে কোন ধরনের কবিতা বেশি প্রাধান্য পায়?

----- দেখো অভিজিৎ, আজ পর্যন্ত যত কবিতা লিখেছি তার একটা শব্দও জোর করে নয়। আসলে আমি তো কবিতা লিখি না, আমাকে দিয়ে কেউ একজন লিখিয়ে নেয়। বিশেষ কোনো কবিতার প্রতি আমার কোনো দুর্বলতা নেই। আমাকে যা লেখায় আমি তাই লিখি। 

৮) আচ্ছা দাদা আপনি কী কোনো পত্রিকার সাথে যুক্ত? কি নাম? কত বছর প্রকাশিত হচ্ছে?

----- আমি যখন ক্লাশ ইলেভেনের ছাত্র তখন থেকেই আমি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করছি। আমার দেশের বাড়ি ধনিয়াখালি। সেখান থেকে আমরা বন্ধুরা মিলে "বিকর্ণ" নামে একটা পত্রিকা বার করতাম। তারপর আমি চুঁচুড়াতে চলে এলে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। চুঁচুড়ায় এসে বছর খানেকের মধ্যেই "মউনি" নামে একটা পত্রিকা বার করতে শুরু করি। কিন্তু সকলের সঙ্গে মতের মিল হয় না। তাই এটিও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর "বৃষ্টিকথা" নামে আবার একটি পত্রিকা বার করতে শুরু করি। কিন্তু মাত্র দুটি সংখ্যা প্রকাশের পরই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর চন্দননগর থেকে "অক্ষর" নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করি। সেটিও বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। এরপরই আমি চুঁচুড়া থেকে "ছায়াবৃত্ত" প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিই। পত্রিকাটি সতের বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে চলেছে। এর পাশাপাশি আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে "কাটুম কুটুম" নামে একটি ছোটদের পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছি।

৯) আপনি একজন সম্পাদক। একজন পত্রিকার পাঠকের কাছে একজন সম্পাদকের কী চাওয়ার থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

----- আমরা যখন ক্লাস ইলেভেনে লিটল ম্যাগাজিন করতে আসি তখন আমাদের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের বন্ধুবান্ধবদের লেখাগুলো একটা জায়গায় প্রকাশ করতে হবে যাতে সবাই পড়তে পারে। আজ যখন কোনো নতুন সংখ্যা প্রকাশ করি তখন মনে হয় পাঠক একবার অন্তত উল্টেপাল্টে দেখুক। পাশাপাশি এটাও মনে হয়, এই লিটল ম্যাগাজিনের জগতে কত কত অসাধারণ কাজ হচ্ছে, পাঠক যথার্থ পত্রিকাকে হাতে তুলে নিয়ে তার জয়গান করুক। কারণ তাতে আর পাঁচটা পাঠকও জানতে পারবে। এই বিশাল জগতে একার পক্ষে তো সবকিছু জেনে ফেলা সম্ভব নয়।

১০) এখন কবিতায় অনেকেই সিম্বল, ইকুয়েশন এমনকি খিস্তিও ব্যবহার করছেন।এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

----- কোনো বিষয়েই আমার কোনো আপত্তি নেই। শুধুমাত্র একটা কথাই বলার আছে, যা কিছুই আসুক তা যেন সাহিত্যের প্রয়োজনে আসে। ইচ্ছা করে কেউ যেন কোনো কিছু প্রয়োগ না করে। তা হলে পাঠক কিন্তু তাকে সমর্থন করবে না। কেউ যেন পাঠককে বোকা না ভাবে। কারণ পাঠককে বোকা ভাবার মতো বোকামি আর নেই।

১১) আপনার কবিতায় শব্দবন্ধ এবং শব্দভাঙা বেশি নজরকাড়ে। এই সম্পর্কে কিছু বলুন,আমাদের পাঠকদের জন্য।

----- ঠিকই বলেছ। আসলে এইধরনের প্রয়োগ আমার ভালো লাগে। যদিও এর সবটাই স্বতঃস্ফূর্ত।

১২) দাদা আপনি কেন কবিতা লেখেন?

----- এই প্রশ্ন যদি আমাকে কেউ করেন তাহলে আমি তাঁকে উল্টে জিজ্ঞাসা করব, আপনি কথা বলেন কেন? হ্যাঁ, আমার কাছে কবিতা লেখাটা মানুষজনদের কথা বলার মতোই। ছাত্রছাত্রীদের কাছেই একমাত্র আমার কথা বলা। বাকি সময় চুপচাপ থাকি। খুব বেশি কথা আমি বলতে পারি না। হৈ চৈ, চিৎকার চেঁচামেচি করার মানুষ আমি নই। আমার পৃথিবীটা খুব নির্জন। গাছতলা, খোলা মাঠ, নদীর ধার, নির্জন রেলস্টেশন আমার পৃথিবীটাকে ঘিরে রেখেছে। অনেক মানুষ আছেন যাঁরা অনায়াসে এদের কাছে চলে যেতে পারেন। আমি অতি নগণ্য এক জীব। আমার তো সেই যোগ্যতা নেই। ওই দু'চার লাইন লিখতে পারি বলেই ওরা আমাকে পাত্তা দেয়। না হলে কোথায় হারিয়ে যেতাম। কেউ আমাকে আটকে রাখতে পারত না। এদের জন্যেই আমার কবিতা লেখা। আমি যখন কোনো রেলস্টেশনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি তখন আমি কবিতা পড়ি। কেন পড়ি বলোতো ? আমি নিজে তো পড়িই এবং তার সঙ্গে স্টেশনকেও কবিতা শোনাই। কত কত লেখা এদের কাছে বসে লিখেছি। বাড়িতে আর কটা লেখা লিখেছি ? হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এদের কাছে সবচেয়ে বেশি সচল। 

১৩) আপনি কি কোনো কবিতা গ্রুপের সাথে যুক্ত, হেয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক গ্রুপ? তার নাম? 

----- এখন তো কোনো গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হতে হয় না, তারাই আমাকে যুক্ত করে দেয়। তাই নাম বলতে পারব না। তবে "শ্রমণ" আর "শব্দের হাতেখড়ি" ----- এই গ্রুপ দুটি উল্লেখযোগ্য। এরা নিয়মিত খুব ভালো ভালো কাজ করে।

১৪) আপনি কি এইসময় তরুণ কবিদের রবীন্দ্রনাথ পড়তে বলবেন  নাকি জীবনানন্দ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শঙ্খঘোষ এঁদের পড়তে বলবেন ? নাকি এইসময়ের কবিতাকে পড়বেন?

----- কবিই বলো আর কবিতাপ্রেমি সাধারণ পাঠকই বলো, পড়াটা নিজের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। যার যা খুশি পড়ুক। পড়তে পড়তে একদিন সে নিজেই ঠিক করে ফেলবে তার কি পড়া উচিত আর কি পড়া উচিত নয়। আমি একটা গ্রামের ছেলে। বাড়ি থেকে কিছুদূরে একটা লাইব্রেরী ছিল। কিন্তু সেখানে বই বলতে কিছু সস্তা উপন্যাস গল্প পাওয়া যেত। কোনো কবিতার বই ছিল না। দু'একটা থাকলেও বাড়িতে আনতে দিত না। কেন সেটা জানি না। দুশ টাকার উপন্যাস বাড়িতে নিয়ে যেতে দিচ্ছে আর কুড়ি টাকার কবিতার বইয়ে হাজার বিধিনিষেধ। তবুও আমি অনেক কবিতার বই পড়েছি। নিজের ইচ্ছা থেকেই অতি সামান্য রোজগার থেকেও কবিতার বই কিনেছি। আমাকে কেউ কোনোদিন বলে দেয় নি। আমার প্রথম বইমেলা আসা ৫৬ টাকা নিয়ে। বারোটা কবিতার বই কিনেছিলাম। তখন রবীন্দ্রসদনের উল্টোদিকে বইমেলা হতো। 

১৫) আচ্ছা দাদা আপনি কি এইসময় main streem এ লিখবেন নাকি আরো আপডেট বা আপগ্রেড বা ভাঙার লেখা লিখবেন?

----- দেখো ভাই, আমি নিজের খেয়ালে লিখি। লেখার পর সেটা কি দাঁড়ালো সেটা পাঠক বলবে। আমি কিছুই জানি না। আর নিজেকে কোনো বিভাগে ফেলতেও চাই না। 

১৬) বহুরৈখিক কবিতা বিষয়ে আপনার কি কোন ধারনা আছে? থাকলে বিষয়টা আপনার কি রকম লাগে?

----- এইমুহূর্তে আমি এইসব কিছু নিয়ে ভাবছি না। 

১৭) এখন ২টো শব্দকে পাশাপাশি বসিয়ে, শব্দের ফোর্স বা শব্দধ্বণির উপর প্রাধান্য দিয়ে কবিতা লেখাও হচ্ছে।এই বিষয়ে কিছু বলুন।

----- আমি চেষ্টা করে কবিতা লিখি না। তাই দুটো শব্দকে পাশাপাশি বসিয়ে কিরকম জোর হয় আমার জানা নেই। তবে আমি একটা কথাই বলতে চাই, যা কিছুই হোক তা যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়। 

১৮) আপনি কি বাংলা কবিতার বাইরে  অন্য ভাষায় লেখা কবিতা পড়েন? যদি পড়েন কোন ভাষায় কোন কবির কবিতা পড়েন?

------ অবশ্যই পড়ি। অক্টাভিও পাজ, ফিলিপ লার্কিন, এলার্দে আমার খুব প্রিয় কবি।

১৯) আপনিতো এখন  লেখা লিখি  করেছেন  বিভিন্ন ওয়েবম্যাগ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট পত্রিকাতেও।  ২টি ভিন্ন মাধ্যমকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

----- দেখো অভিজিৎ, আমি দুটোকেই সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। যখন লেখালিখি শুরু করি তখন এসব কিছুই ছিল না। আজ কিন্তু ওয়েবম্যাগের রমরমা। কিছু করার নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুরই বদল ঘটবে আর সেটাকে আমাদের মানিয়েও নিতে হবে। কারণ এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। শুধু শুধু আবেগের বশে পুরোনো ধ্যানধারণাকে আগলে রেখে তো কোনো লাভ নেই। কিছু করিৎকর্মা যুবক পয়সার জন্য পত্রিকা করতে পারছে না, এরা যদি ওয়েবম্যাগে আসে তাহলে অসুবিধার কি আছে? আমি নিয়মিত আমাদের এখানকার এবং বাংলাদেশের অজস্র ওয়েব ম্যাগাজিনে লিখি। এছাড়া পৃথিবীর আরও কয়েকটি দেশের ওয়েব ম্যাগাজিনে আমি লিখি। আমি লিখতে ভালোবাসি তাই ভালো লেখাটাই আমার কাছে প্রধান। কোথায় প্রকাশিত হল এটা আমার কাছে গৌণ। 

২০) আপনার কি মনে হয় web.mag, print media কে অতিক্রম করতে সক্ষম হবে?

----- অতিক্রম করবে কি করবে না সেটা সময় বলবে। আর যদি করেই যায় তাতে কি হয়েছে? দুটোতেই তো সাহিত্য গুরুত্ব পাচ্ছে। তাহলে অসুবিধা কোথায় ? 

২১)  এখন অজস্র কবিতা লেখা হচ্ছে।বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশও হচ্ছে। কিন্তু তারপর আর কবিতাগুলির হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না।আপনার মতে এর কারণ কী? 

----- এটাই তো স্বাভাবিক। যা জমা দিচ্ছি তাই যদি প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে মানটা রক্ষিত হবে কিভাবে ? একটা লেখক যদি আগে থেকে ঠিক করে রাখেন যে এবারে তিনি পুজোয় দু'শোটা কাগজে লিখবেন তাহলে এই পরিণতিই হবে। কি লিখব সেটা না ভেবে, কতগুলো লিখব সেটাই এখন প্রধান হয়ে উঠছে। এমন অনেক সম্পাদক আছেন যারা কবিতাটা বোঝেনই না। কারণ তিনি মনে করছেন কবিতা না বুঝেও পত্রিকা করা যায়। তার কাছে পত্রিকা করা মানে কিছু কবিতাকে এক জায়গায় জড়ো করে পত্রিকা প্রকাশ করে দেওয়া। তিনি শুধু এই অনুপাত মাথায় রেখেছেন তিনি একশ কবিকে তার পত্রিকায় জায়গা দিলে তিনিও ওই একশ পত্রিকায় লিখতে পারবেন। এই অবস্থার হাত থেকে বাংলা কবিতাকে বাঁচাবে কিভাবে তুমি? তবে আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃত কবিতা ঠিক পাঠকের হাতে পড়বে আর তা বেঁচেও থাকবে। 

২২) চারিদিকে কবিতার জন্য বিভিন্ন ম্যাগাজিন, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কবিদের সম্মান জানানো হচ্ছে। এতে কি কবিতার উন্নতি হচ্ছে?  এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

----- পুরস্কারের সঙ্গে কবিতার উন্নতির কোনো সম্পর্ক নেই। এখন তো যদু মধু সবাই পুরস্কার পাচ্ছে। পুরস্কার পয়সা দিয়ে কেনাও যাচ্ছে। বিভিন্ন উৎসবগুলোর দিকে তাকাও, যারা একমাসও কবিতা লিখতে আসে নি তারাও গিয়ে কবিতা পড়ে আসছে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক পত্রিকাগুলোর কবিতা বিভাগের দিকে তাকাও, সেখানে কি কবিতা ছাপা হচ্ছে ? কাদের কবিতা ছাপা হচ্ছে? এগুলো তোমার আমার চাওয়ার ওপর নির্ভর করে না।এগুলো নতুন কিছু নয়। এসব আগেও হয়েছে, এখন আরও বেশি হচ্ছে। তফাৎ এটুকুই। 

২৩)  আপনার কতগুলো একক কাব্যগ্রন্থ আছে। আপনার কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে আপনি পাঠকদের কি বার্তা দিতে চেয়েছেন?

----- একটি। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছ। মাত্র একটি ----- " তুমি অনন্ত জলধি "। আমি বার্তা দেওয়ার কে অভিজিৎ? আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। আমার কবিতার মাধ্যমে আমি বলতে চেয়েছি ------ নদী জল মাটি গাছপালার ওপর মানুষ আরও যত্নবান হোক। মানুষ তার পাশের জনকে মনে করুক সে আমারই মতো একজন মানুষ। 

২৪) আপনি কি বিশ্বাস করেন কবিতা লিখে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব?

----- শুধু কবিতা কেন, কিছু করেই তুমি সমাজের নামমাত্র পরিবর্তন করতে পারবে না। সমাজ এবং তার মানুষজন যে জায়গায় ছিল সেই জায়গাতেই থেকে যাবে। তাহলে বলবে, আমি কবিতা কেন লিখি? আমার কাছে কবিতা লেখা মানে খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়ানো। নিজেকে শুদ্ধ রাখা।

২৫) কবিতা লিখতে এসে বা সম্পাদনা করতে গিয়ে  আপনাকে নিশ্চয়ই অনেক প্রতিকূলতার স্বীকার হতে হয়েছে? আমাদের যদি কিছু বলুন।

----- কবি এবং সম্পাদক ------ দুই জায়গাতেই অনেক অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ওসব বলতে গেলে একটা মহাভারত হয়ে যাবে। গ্রাম থেকে উঠে আসা মানুষ আমি। আমাদের সহ্য ক্ষমতা সম্পর্কে কারও কোনো ধারণাই নেই। নিজের ইচ্ছাতেই আমি এই জগতে এসেছি। তাই কারও বক্তব্যে আমার কিছু যায় আসে না। যা পেয়েছি নিজের যোগ্যতাতেই পেয়েছি। কারও খাতায় এখনও পর্যন্ত আমার কোনো নাম নেই।

২৬) আমাদের এবং সকল পাঠকদের কাছে আপনার বার্তা---

----- কবি এবং পাঠকদের কাছে আমার একটাই বক্তব্য, কবিতাকে ভালোবাসুন। এটা যদি আমরা একভাগও পেরে থাকি তাহলে আমাদের আর কিছু লাগবে না। সব কিছু তুচ্ছ মনে হবে। কবিতার গন্ধ যে পেয়েছে তার আর কোনোকিছুর প্রয়োজন নেই। 


হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতা 

কষ্টে ভিজে গেলে

কষ্টে ভিজে গেলে শরীর শক্ত হয়ে যায়

গাছের মতো একটানা দিনে
যে সকাল এসে দাঁড়িয়েছিল চৌরাস্তায়
কষ্টে খুব ভিজেছিল সে
শক্ত শরীরেই খুলে গেল আশ্রয়ের ঠিকানা
সকলেই চিনেছিল,

সব ঘরে খুলে গেলে তালা
কষ্টের ভিজে জামা খড়খড়ে হলে
ভুলে যায় সব্বাই
কি ছিল দুয়ারে বারান্দায়

দুয়ার থেকে নেমে গেলে রোদ
দু'পায়ে ক্লান্তি নামে
হাত শুধু বেড়ে যায় দুয়ারে দুয়ারে
তবু তাকে ডাকেনি কেউ, দুয়ার খুলে দেয়নি আসন

যদি আবার পুবের দুয়ার খুলে পাখিদল নেমে আসে
চিনে নেব আলো ----- 
দুজনেরই বাসা হবে গভীর গাছের কাছে
কোমর ছাড়িয়ে হাত কাঁধে কাঁধে মিলে যাবে গান ।



মাটির দিনের গল্প

এইমুহূর্তে পৃথিবীর কোনো স্কুলে
মাটির দিনের গল্প হচ্ছে
ঘরের যত আরশোলা মাছি
দমবন্ধের পরিবেশের সমীকরণে
পা মেলাতে কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে
জানলা দরজা বন্ধ হয়ে গেলে
মাটির দিনে বন্যা নামে
আজকের অপলকা পায়ের পৃথিবী
বন্যার জলে গুলে যায়
কেউ একজন হাত তুলতে নদী বাঁক নেয়

দাদুর গল্পের চরিত্ররা
মাটির দিনের গল্পে হেঁটে যায়
অনেকেরই মনে পড়ে যায়
কেউ যেন তাদের গল্পে 
এইসব লোকেদের ঘর বানিয়ে দিয়েছিল
ডাকলেই তারা ফিরে চাইবে
কিন্তু কি হবে তাদের ডাকনাম ------
এসব ভাবতে ভাবতে তারা 
আরও অনেকটা এগিয়ে যায়
কেউ কেউ অন্য মুখে 
অন্য গল্পের ঘরে ঢুকে পড়ে

আগুন ডাকতে জানে না বলে
পৃথিবীতে অন্ধকার নামে ।



বিষন্ন বিকেলে

মানুষের গন্ধ নিয়ে যে জাহাজটা
ভেসে গেছে গত মাসের এক বিষন্ন বিকেলে
সে জাহাজের ছায়া আছে লেগে
দুপুরের জানলা থেকে যার রোদ এখনও শুকিয়ে যায় নি

এই তো সেদিনও বন্দর জুড়ে দারুণ কোলাহল
মাথা গুনে যারা দেবে জাহাজেতে টান
তারা সব দাঁড়িয়ে থাকে হলুদ বিকেল খেতে

দুপুরের রোদে যারা চরতে বেড়িয়েছিল
তাদের বেশ কিছু মুখ গেয়ে উঠেছিল গান
দুপুরের নামতা মুখস্থ করে তারাও 
হলুদ বিকেল গায়ে মাখতে পেরেছিল
ঠিক গান নয়
সুরের সূচ অনভ্যস্ত গলায় এসে বিঁধেছিল 
তারাও সব দলবেঁধে উঠেছিল জাহাজে

বটপাতায় এখন সন্ধের ঘর 
নক্ষত্রের প্রদীপ বাতির মতো একাকী দাঁড়িয়ে থাকে
হাতে গোনা দু'একজন আকাশে মুখ রাখে
পান করে নেবে জলময় মেঘ
এইভাবেই বটপাতা ভোর থেকে বাসা-গান গেয়ে নেবে
পৃথিবীর মাটিতে মাটিতে ।


ধন্যবাদ হরিৎ দা সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন  সকল পাঠকের তরফ থেকে আপনার ব্যস্ত সময়ের থেকে আমাকে এবং আমাদের পাঠকদের জন্য সময় বের করে আপনার মনের না বলতে পারা কথাগুলো আমাদের জানালেন। আমরা পৌঁছে দেব আপনার কথাগুলো সকলের কাছে।ভালো থাকবেন। এই ভাবেই সাহিত্যে থাকবেন। ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রইল আপনার জন্য...



No comments: