Thursday, April 15, 2021

১-লা বৈশাখ সংখ্যা || ২টি-কবিতায়~শীলা বিশ্বাস

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||   

শীলা বিশ্বাস

হাড়ের তানপুরা

১)

এ কেমন চাঁদ নিজের মুখে দর্পণ ধরে না।লুকানো হাড়ের তানপুরা সুরের ভেতরে গুঁজে দিচ্ছে আগুন।হাতের ভিতরে পা গজাচ্ছে পায়ের ভিতর হাত।মুখ থেকে অজস্র চোখ বেরিয়ে আসছে দেখার খিদে নিয়ে। অপুর চোখের খিদে যেমন ধরে রাখে পথ তার পাঁচালিতে যেমন বিভূতিভূষণ ছড়িয়ে দেন খিদে তার অক্ষর শিরায়।মদালসা চাঁদেও খিদে ও অক্ষর জমানো আছে। কলঙ্কগুলি আসলে এক একটি সুড়ঙ্গ। সেই সুড়ঙ্গের গরাদ অন্ধকারে চোখ টিপে হাসি ছড়িয়ে গেল জোনাকিরা।

২)

ভিতরে আলো-ছায়া স্মৃতি-বিস্মৃতি সমস্ত পুর্বাপর যেন ভিক্ষুণীর থেরী গাথা গীত হচ্ছে ভাব তরঙ্গে। ভেসে বেড়ানো জলীয় বাষ্পকণা বুদবুদে রূপান্তরিত হলে ভিতরে একটা আস্ত আমি নিয়ে উড়ে যায় দিগন্ত পারে।সমুদ্রের পাড় থেকে দূরে নৌকার সিল্যুয়েটের রহস্য ভেদ করা যায় না।পথ হারানো পাখির মত মগজ-কম্পাস দিয়ে একাকী নৌকা আবিষ্কার করছে পুরানো স্বপ্নপথ।বাঁধ ভেঙে কদাচিত তানপুরা হাসে। সেই হাসিতে কেউ অবগাহন সেরে নেয় কেউ সাধন।




১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~মন্দিরা ঘোষ

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||  

মন্দিরা  ঘোষ

যে অন্ধকার আলোর আড়াল চায়

যখন কোনো চেনা রাত আগন্তুক  হয়ে ওঠে
ভয়  দরজা খুলে দ্যায় আর্তচিৎকারের
প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের মাঝে
দাঁড়িয়ে  থাকে সমঝোতার রসায়ন
 
মেঘের পালক জানে
যে অন্ধকার আলোর আড়াল চায়
সেখানকার আকাশের নাম মুক্তি

এগ্রিমেন্টের  পাতায় আটকে থাকে 
সামাজিক বিকেলের ভূমিকা
পুরোনো সম্পর্কের  আপডেটে
ডিলিট হয়ে যায় একটি ফোল্ডেড রুমাল
যার ভাঁজে লুকোনো ছিলো
একটি জারুলফুলের সন্ধ্যা



১-লা বৈশাখ সংখ্যা || মুক্তগদ্যে~চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||    

চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

একটি  মুক্তগদ্য

আহ্ কো চাহিয়ে এক উম্র অসর হোনে তক
কৌন জীতা হ্যায় তেরে জ়ুল্ফ় কে সর হোনে তক'
                                           --মির্জ়া গ়ালিব

দেখা হওয়ার কথা ছিল প্রথমদিনেই বেশ বোঝা
গিয়েছিল। আমি এক দুঃখের সাঁকোর উপর
দুলছিলাম, তুমি অন্যপারে প্রভূত অন্ধকার ভেঙে
উঠে এসেছিলে। আকাশের মতো ছড়িয়ে পড়া
খোলা চুল আর তার নিবিড় শূন্যতায় তোমার
দুচোখ নক্ষত্র ছুঁয়ে কালপুরুষ। অথচ কিছুই বুঝে
ওঠা হল না। এক পরম্পরার গাঁথনিতে ইঁটের
উপর ইঁট সাজিয়ে যেমন আর পাঁচটা সামাজিক
সম্পর্ক হয় এও তেমন। সম্পর্কে চোরাপথ ছিল,
হাইবারনেশনে ঘুমিয়ে থাকা এক অন্য সম্পর্কের
ঢেউ ঝকঝকে রোদের মতো ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে
উঠছিল। দেখা হয়েছিল অবশ্য গোধূলি এবং
সন্ধ্যার সম্মিলনের রঙে। বয়স দ্রুতগতিতে ছুটতে
ছুটতে একইজায়গায় থম মেরে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
বহমান সেই সময় চুক্তিবদ্ধ করে, ধীরে ধীরে
কড়ায়ক্রান্তিতে অনিচ্ছা বদলে দিয়েছিল ইচ্ছের
জারদৌসি কাজের জমাট বুননে।

মধ্যবর্তী সাঁকোটি বেশ বয়স্ক, তিনদশক পেরিয়েছে
সে অর্থে। অতিসামান্য যে কয়েকবছর দীর্ঘ দীর্ঘ
ব্যবধানে সাঁকো পেরিয়ে আমরা এলাম গেলাম,
তার চিহ্ন মুছে যায়নি, হয়তো গেছে, নির্দিষ্ট করে
কিছুই বলা যায় না। শরীরের অভ্যন্তরে যে গুহা
থাকে, তার ভিতরে ছোট ছোট পুষ্করিণী থাকে, ঢেউ
থাকে নিশ্চুপ। হেমন্তের বন্য হাওয়ায় আর্দ্র রম্য
শীতে কেঁপে উঠলে বোঝা যায় ঢেউয়ের নগ্নতা,
ঝড়। তখন সাঁকো দুলে ওঠে, গূঢ় তমিস্রায়
তলিয়ে যায় তিলোত্তমার তৃতীয় নয়ন, শবের
শরীরে তন্ত্রে জেগে ওঠে শিব। সন্ধিপুজোর
আয়োজন, আরতি। প্রারদ্ধের মৃত্যু হয় জন্মান্তরের
নতুন গল্পে।

'Coz if love means forever, expecting
nothing returned
Then I hope I'll be given another whole
lifetime to learn'
                                    --Joan Baez

চিনেছি কি তোমাকে জন্মান্তর ঘেঁষে? তুমি কি
বুঝেছ কতটুকু প্রাপ্তি কত অপ্রাপ্তির ভুল থেকে
গেল? এত ভুল হবে বলে বারবার সাঁকো পার হয়ে
যাতায়াত? না কি এই অবিনাশ যাত্রার মোহে
আবারও ফেরা? শেষ শূন্যতায় অতিরিক্ত কিছুই
নিয়ে যেতে চাই না। যে অসমাপ্ত ঘুঙুরের বোল
হারিয়ে গেল সাঁকো পারাপারে, হারিয়ে যাওয়ার সে
তৃপ্তিটুকু থাক। বন্ধকী সুর পড়ে আছে; ছাড়িয়ে
নিলে প্রারদ্ধের গাঁটরিটি বাহুল্যবর্জিত হতে পারে
আগম-নিগম ত্রিভুজচিহ্নে। আমেন ।।

'তোমাকে দেখেছি সেইখানে
জন্মান্তরের কাছে এসে
অথবা মৃত্যুর কাছাকাছি
গিয়েছে অনন্তে মেঘ ভেসে'
                               --কালীকৃষ্ণ গুহ



১-লা বৈশাখ সংখ্যা || কবিতায়~অনুরূপা পালচৌধুরী

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||   

অনুরূপা পালচৌধুরী

মুখজোন ______

গুলো জপে জপে জৈবিক ব্যবধান। থকথকে সেকেন্ডের রোদসেকি মাঘের অ্যামেচার গোলা মসৃণ শূন্যের স্তন। বিষয়ী ত্রিভুজ আঁকো। পৈঠানী আপেলের সিরাম গ্লাসিরুটের ঘুমস্রাব। চুপচাপ ঘড়ি : গারোয়া সিনা তুলে বেনামি রোদ্দুরের বাক্সভেজা ময়দান। আমাদের বসবাসগুলি শীতঘুম ভাঙে আঙুলের গোলাঘরে। পাখি পড়া ঘুড়ির আলো গলে সিজারিয়ান ব্লু লিস্ট দু'পায়া বোরোলিনের ফোরাম। কম্পাউন্ড কামিজ আর পাতকুড়ে থালার টেক্সুয়াল মেমারি বলতেই হলো দ-ঘরে পরিমল এখন নেভিলু স্ট্রোকের ড্রইংফল। জলখালি অপেরার খিলখিলে সাংসদ চৌঠা খাদকের লেগুনবর্ণ। নেমে আসি আমি ও আমাদের কোণভাঙা ১বাটি চাঁদের নোমান। সন্ধিবাড়ির বজরা ছড়িয়ে পড়ছে শ্যাওলা জিভের সুনামি। তবু : জলীয় প্রস্থানের ঘনিষ্ঠ বৈধতা




১-লা বৈশাখ সংখ্যা || ২টি-কবিতায়~রণজিত্ পাণ্ডে

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  ১-লা বৈশাখ সংখ্যা ||  

রণজিত্ পাণ্ডে

ভিতরের  সীমানা

আবেগের  মুখে ঠুসি পড়িয়ে
বুকের মধ্যে কেমন যেন বেঠিক বেঠিক আওয়াজ হচ্ছিল ক্রমাগত

তবুও আতঙ্কের প্রাচীর টপকে নীচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম-

ওপাড়ের নোংরা জানোয়ারগুলো
                             ধর্ম খাচ্ছে প্রকাশ্যেই

সাহিত্যের ইতিহাস ঘেঁটে অঙ্ক মেলানোর চেষ্টা করতেই
           কে যেন ধমক দিয়ে  বলল-
নেতাদের মতো একদম  মিথ্যে বলবে না

          ইদানিং সব ঘটনার পিছনেই রয়েছে
ভুল বোঝা আর ভুল বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা

মনের পাখিটি তাই  মনখুলে উড়তেই চাই না
                 লম্বা পায়ে পালানোর চেষ্টায় ব্যস্ত

কারণ এভাবে তাদের  বিপদ এড়ানো নাকি সহজ হয়

উল্টো দিকটায় ক,দিন ধরে   তারস্বরে বিশাল  প্রচার হচ্ছে
   তাতে  গোপন অঙ্গটিও নড়ে গেল হঠাৎ

               অনুগ্রহ করে শুনবেন-
  বিনা পুঁজিতে কোটিপতি হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ
             " রাজনীতি শিক্ষা সেন্টার "

আমি ঠিকানা শুনবার  জন্য উদগ্রীব হতেই  ভিতরের সীমানাটা সিল হয়ে গেল অজান্তেই


চেতনার উড়ালপুল


বিজ্ঞানের মুঠো মুঠো আন্তরিক ছোঁয়া
                আমাকে আপ্লুত করেছে প্রতিদিন

তবুও মৌল অভিব্যক্তিগুলো  যখন অভিযোগের শ্লোগান তোলে -
( প্রেম ভক্তি মূল্যবোধ/ কে আমাদের  নিয়ন্ত্রক
      সৌহার্দ্য  শিল্পবোধ/ কে আমাদের  নিয়ন্ত্রক )

তখন বিজ্ঞানের শাখায় শাখায় ডুব মেরে
নিরাশ হয়ে পড়ি

     সীমাবদ্ধতায় আটকে যায় জ্ঞানেন্দ্রিয়ের জ্ঞান

  ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে দেখি
              উপর্যুপরি পাল্টে যাওয়া অপূর্ণতার গলি

  তবুও অভিজ্ঞ তাওয়াই  সেঁকে নিই মানবিক প্রজ্ঞা

   তাই  চোখের ধর্মকে অবিশ্বাস করে
                                            অন্ধ হতে চাইনি

কেননা
     চেতন রাজ্যের উত্তরণে যে কোন  বিশেষ জ্ঞানই আশীর্বাদ রূপে জ্যান্ত থাকে  চিরন্তন