Thursday, September 24, 2020

|| ছক্কা ফর্মের কবিতা ≈ মৃণালেন্দু দাশ ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
ছক্কা ফর্মের কবিতা
মৃণালেন্দু  দাশ.
পরিচিতি::

জন্মাবধি উত্তর চব্বিশ পরগণার কাঁচরাপাড়ার আব্দুলজব্বার রোডে বসবাস ৷জন্মঃ ১০ই ফেব্রুয়ারী ১৯৫৭ ৷ ১৯৭৯-তে প্রথম আমার কবিতা ও ছড়া প্রকাশিত হয় দৈনিক পয়গম সংবাদপত্রে ৷ তারপর একে একে প্রকাশিত হতে থাকে ছড়া, কবিতা ,ছোটদের উপযোগী গল্প ,ফিচার এবং বড়দের জন্য ফিচার ,গল্প ও কবিতা  বসুমতী সংবাদপত্র, যুগন্তর সংবাদপত্র, আনন্দবাডার পত্রিকায়(একবারই ছোটদের জন্য সোমবারের আনন্দমেলার পাতায়  ওভার ল্যান্ড  ইত্যাদি সংবাদপত্র৷  এছাড়া দেশ(সম্ভবতঃ১৯৮৮-৮৯ হবে),প্রতিক্ষণ,শিলাদিত্য, তথ্যকেন্দ্র, কবিসস্মেলন, কলেজস্ট্রিট  প্রভৃতি পত্রিকায় লিখে চলেছি সাধারণ সংখ্যা ও শারদীয় সংখ্যাতেও ,এছাড়া বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিন ও অনলাইন ব্লগ ভারত বাংলাদেশ সহ অনেকগুলিতেই নিয়মিত লিখছি৷সম্পাদনা করেছি "ব্যাস" নামক একটি কবিতার কাগজ আশির দশকে ৷

প্রকাশিত কবিতার বই --১. অহল্যা কন্যা আমার (১৯৮৬) ৷বইটি তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ'র আর্থিক সহয়াতায় প্রকাশিত হয় ৷ দ্বিতীয় কবিতার বই—বজ্রবিদ্যুত ঘুড়ি(২০১৮) ,প্রকাশকঃআলোপৃথিবী এবং তৃতীয়- বজ্রবিদ্যুত ঘূড়ি 





তিন ছক্কা পুট  

হাত
হাত

খোলা  তলোয়ার

চারদিক  সশব্দে  কেঁপে  উঠছে

ঝনঝন  করে  কাচের  টুকরোর  মতো  ছত্রাকার

ট্র্যাক  চ্যুত  হতে  পারে  ট্রেণ

যে  কোনো   মুহুর্তে

ঘুম
ঘুম

উবে  গেছে  ভাত

যেভাবে  পাখিও

খাঁচা  ভেঙে  নিজের  ইচ্ছেয়  আকাশে  পালায়

সেরকম  অনেকেই  অজানার  খোঁজে

আমিও   ঘুমকে  ঘুম  পাড়িয়ে  উড়ব


করোনা
বাঁদুর  হাসছিল

বেতস  গাছের   মগ  ডালে  বসে  বসে

রাত  গড়িয়ে  পড়ছিল  বিছানায়

ভয়ে  কেউ  কাউকে  ছুঁয়েও  দেখছিলনা

যদি

করোনা  ছুঁয়ে  দেয়


ধর্ষিতা
চাঁদের   নাকে   নাকচাবি

জ্যোৎস্না   তাইতো   সুন্দরী  হয়ে   উঠেছে

দেমাকি

গ্রহণ   ঢেকে   দিল   মুখ

আঁধার  নামল

চাঁদের   কাপড়ে   রক্তের   দাগ   ধর্ষিতা   হল


শ্রাবণ
বৃষ্টি   হচ্ছে

শ্রাবণ

সন্ধ্যা   মুখার্জির   গান   ভাসছে

হাতে   এলো   পোস্টকার্ডে   লেখা   চিঠি

মাধবীর   হাতে   মল্লিকা   গোপনে   ওষ্ঠ   চুম্বন

লাজুক  ছিল   গোধূলি



কাগজের নৌকো
কাগজের   নৌকো   করে   যায়   ছেলেবেলা

কুলের   আচাড়   খেতে   খেতে    হেসেছিল   মিতাদি

খুব   টিপেছিল   গাল

বুঝিনি    সেদিন

প্রেম

ভালোবাসা   প্রকাশের   একধরণের  ছল


জল
জল   গড়িয়ে   গড়িয়ে   মাটি   ছুঁয়ে    নদী

বড়   হাবাগোবা    তুই

দয়াল   জানেন

ঔদ্ধত্য

মুখ   বুঁজে    মানাও   যায়না

সাগর  লাফিয়ে   লাফিয়ে   আছড়ে   পড়ছে



সেলাই

কথা   সেলাই   করছিল   ঠৌঁট

সবাই  বলল  বাঃ  চমৎকার  নকশিকথা

ঠৌঁট   হেসে   ওঠে   সেলাই  বন্ধ  করে

কথা   ছড়িয়ে   যায়

চারদিকে  এমন

বিশ্রী


বিপদ  সীমা

স্বপ্ন

দেখা  ভালো

রাতেই  ঘুমে  দুপুরে  না

তাহলে  বিপদ  সীমার   উর্দ্ধে   বইবে   জল

বাণভাসি  হওয়া  ছাড়া   উপায়   থাকবেনা

সাঁতার  জানতে   হয়


শিকড়

গাছ

শিকড়   চাড়িয়ে   মাটিতে

দাঁড়িয়ে    থাকে

মাটি   ধরে   রাখে    স্নেহ   রস  দিয়ে

জল   তার   সেই  শক্তি

জলই   জীবন  মাটির   অর্থ  ধৈর্য



দুর্গন্ধ
হয়তো   ছিল

নিজের  মতো  আবডালে   গুটিশুঁটি  মেরে   চুপ

পাতাও  নড়ছিলনা  পোড়া  রোদ্দুরে

ঝলসে  উঠছিল  চামড়া  এমন  যে

দুর্গন্ধ

বিপদ  ডাকল  সহসা


রিফিল

রিফিল   শেষ  হতেই

লেখা   ফেলে   দিন   গড়াল   সন্ধ্যায়

কবিতা

ক্রমশঃ   ধূসর  থেকে   স্পষ্ট

ফুল  ফুটল

প্রকৃতির  ভিতর  লুকিয়ে  আছে   সৃষ্টির  সূত্র


লালসা
চোখের   সামনে   দেখি   সাধু

দিনের   মতো   যার   ঝকঝকে   চেহারা

তাকেই    কিনা   কালি    ছিটিয়ে   দিল   লালসা

ত্রাণের   বস্তা   নিয়ে

পিঠ   টান

শেষে


ফুরফুরে
চলো  ফিরি

হাত   মুখ   ধুয়ে    ফ্রেস   হই    বাড়িতে

ফুরফুরে    মনে   হবে   নিজেকে

যেন    ডানার   মতো   মতো    হালকা    ফুলকা

পাখি

উড়তে    গেলে    ধপাস


বিষম
নাজানি   কথা

একটা   শহর   থেকে   আরেকটা    শহরের   দিকে

ঘুম   কেড়ে    নেয়    পথ

স্পষ্টত    কেউ    কারোর    মতো   নয়

অথ

প্রেম   বিষম    জ্বালায়



|| ছক্কা ফর্মের কবিতা ≈ চন্দ্রদীপা সেনশর্মা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
ছক্কা ফর্মের কবিতা
চন্দ্রদীপা সেনশর্মা
পরিচিতি::

খুব পরিচিত লেখক না, পিতৃসূত্রে সাহিত্যে জড়িয়ে পড়া পিতা পাঁচের দশকের গল্পলেখক কবি অনুবাদক সমালোচক অজয় দাশগুপ্ত প্রথম বই :বিশ্বকাপ ফুটবল ১৯৯০ বিবাহসূত্রে দীর্ঘ প্রবাসবাস, নয়ের দশকের শেষে কবিতা লেখা শুরু, অনিমিয়ত কবিতার বই : অপরাহ্ণ মন,২০০৩, সামনে সাগর : ২০০৪(কবিতা পাক্ষিক); পথের নির্মাণ, ২০০৭(মহাপৃথিবী) ২০০৭ বাবার মৃত্যুর পর দীর্ঘ বিরতি ২০১৮ জুনে লেখায় ফেরা কৃত্তিবাস জুলাই-সেপ্টেম্বর সংখ্যায় এরপর মহাপৃথিবী কবিতা পাক্ষিক কবিতা সীমান্ত এবং বিভিন্ন ওয়েব পত্রিকায় ২০১৯ কালীকৃষ্ণ গুহ সম্পাদিত 'কাব্যসংগ্রহ অজয় দাশগুপ্ত' গ্রন্থের প্রুফ দেখা সহযোগিতা করা ২০১৯ জোড়াসাঁকো লিটল ম্যাগাজিন মেলায় চতুর্থ কবিতার বই প্রকাশিত হয় : মন্থর মুহূর্তগুলি(আলোপৃথিবী)



লুডোর ডাইসে বাঁধা

.
নিয়ন আলোর গা ঘেঁষে
বজ্রপাত, বৃষ্টি
সময় পুড়ছিল
জোরালো, নিভু নিভু
দীর্ঘ টানের পর ছুঁড়ে ফেলা
ভিজে ঘাসের বুক পুড়ছে, দহন

.
বেশ কয়েকদিন পর
আজ ডেনভার বেজে চলেছে
যেসব বৃষ্টির বন্দিশে হেঁটেছিল অ্যাকোয়েস্টিক সুর
দীর্ঘতম ছোটগল্পের তৃষিত অতীত
অবরুদ্ধ ভাঙনের স্বর
কান্না...

.
সেদিন, চোখ ডুবে গিয়েছিল নেশায়
আকন্ঠ ঝাঁঝালো তরল,
ট্রান্স!
নদী খোঁজে
অতিরিক্ত বৃষ্টির আকাশ, উজান--
শালীন ঘুম সামলে নিয়েছিল ট্রান্স, নীলকণ্ঠে

.
ঘুমের ভিতর অশ্রুত ধ্বনির বৃষ্টি
সন্ধিত মুঠিতে নিসর্গ আঁচল
নীবিবন্ধ কাঁপে
রাতের সিলিং,
আলো অশ্রু নারী
অর্ধস্ফুট বাক বৃষ্টিসান্দ্র একাকী কবিতা...

.
গতরাতের ঝড়বৃষ্টির পর বারান্দায় ভোর
চেয়ারে বসে বিনিদ্র দুচোখ
আড়মোড়া ভাঙে ঘরের ঘুমশরীর
বারান্দায় আসে
অবনত, নির্জন বিদায়
যাওয়ার পথটুকু রৌদ্রস্নাত!


.
বিগতদিনের কথায় কথায়
নান্দনিক স্বপ্ন নৌকা বৈঠা, পাড়ি
উচ্চাকাঙ্ক্ষী গানগুলি জলের ভাসানে
শব্দের কলম বৃষ্টি লেখে
মৃত্যুও
পুনর্জন্ম, জাতকের কথা

.
দেখা হয়ে যায় পুনরায়
দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েও
বিহ্বল
অবেলায় স্নেহ দীর্ঘ
তার ছায়াটি আরো দীর্ঘ
বাধা দিতে গিয়ে ফিরে আসে হাত

.
ছোট ছোট বিভ্রান্তনিমেষ
বন্ধুত্ব, অবিশ্বাস, অনিবার্য ভাঙন--
প্রান্তরের
শেষ গাছটি নুয়ে আসে,
অশ্রু ঝরে অহেতুক।
থেকে যায় রাতের ছাদ, দুটি বই

.
একরং দুইরং কত আরো রং
মেনোপজের অমলিন
শিলালিপি
কৃতকর্ম বা
প্রারদ্ধপথে প্রৌঢ় রৌদ্রে অন্তিম রং
ব্যর্থতার মেঘ জমে, অনিদ্রার রং দীর্ঘতর

১০.
সমগ্র এক পথ ডুবছে
বহ্নিশিখায় জ্বলে উঠছে অপরাহ্ণ
আর কতদূর
নীলাকাশ, হে প্রিয়
নিরুদ্দেশ যাত্রার সমাপন?
বিশুদ্ধ রাতের নক্ষত্র, বন্ধুতা, আনন্দলহরি...

 


|| ছক্কা ফর্মের কবিতা ≈ দেবযানী বসু ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
ছক্কা ফর্মের কবিতা
দেবযানী বসু
পরিচিতি ::  
দেবযানী বসু। জন্ম : ১৯৬০,বর্তমান নিবাস : টালিগঞ্জ, শিক্ষা : বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর, বি,এড । শূন্যদশকে লিখতে আসা।কৃত্তিবাস প্রতিভাস কবিতাক্যাম্পাস সুতরাং থেকে কবিতার বই প্রকাশিত
বইয়ের নাম: দেবযানীর স্বীকারোক্তি,স্বপ্নিল বর্ণমালা,তৃতীয়া পৃথিবী,আইভরি খাতা,নোনামিঠে জলচিহ্ন,রেডিও অ্যাক্টিভ মিনারেল বৃষ্টি, চৌরেখাবতী পিরামিডের অরোরা,স্ট্রবেরিগন্ধার যোজনপথ



১. 
কে সেই সুন্দরী?
হাসির ফুলকি ঝরছে
স্ত্রী কাকের আখ্যায়িকা শরীর
আনন্দের কনৌজি
হাড়গিলেদের সংসারে কাহারবা অনুসৃতি
পর্ব পর্বান্তরে বাড়ে
ছোঁ মেরে নিচ্ছে ব্রজবুলির বুক

২. 
স্বাদ অনুযায়ী লবণ
আলুপোস্ত
একটু পেঁয়াজ চাওয়ার সহজপাঠ
কতোটা গুঞ্জন বাড়ে আলোআঁধারিতে ?
কতোটা গুঞ্জন আছে গলার ঢালে?
তুমি জানো
আমাকে জানাও

৩. 
সাবধান
তিলাঞ্জলি
গাছেরা পা ফাঁক করে হাঁটে
চোখ খোলো দেখো না ওভাবে
প্রেতের হাত মেলে ধরা উজবুক শরীর
মন বসাও
গাড়েলা রাস্তা

৪. 
ওঁৎবিড়াল
গা শোকাশুঁকি কর
সবজিওয়ালী ট্রেনের চোখে জল
বীর্যশক্তি পেয়ে পতন ছোটে জিডিপির মতো
সরস পয়সার মতো চামড়া আমাদের
আমিও সুযোগসন্ধানী বটে
ওঁৎবিড়াল

৫. 
চক্কর
খারাপ ছোঁয়াছুঁয়িতে ফুল ফুটছে অসহায় দিন
বাতিদন্ড ছায়া খোলাপড়া করে
আড়কাঠি জাগ্ৰত
সামলাচ্ছি 
চাই ছোঁয়াছুঁয়ির আলোমন
খিদের শিকলে মরচে পড়ে না

৬. 
বডিমামলা
রাতের আঁশগন্ধ বাঁশবনে
মৃত্যুর বিমা নিয়ে ফিরে যায় অসুখ
বডিদের কারচুপি বাড়ে
ওষুধ ঘুমিয়েছে আমাকে ভালোবেসে
ঢাকঢোলহীনতা
করোনায় মৃতদের প্রেতাত্মা হয়না

৭. 
ধ্বংসপোড়া রতিভস্ম
শামুক পাথর ঝিনুকরা মরে সাদা
গেঁড়ি গুগলিদের রাজত্ব
সীমান্তের পপকর্ন টিভির পর্দায় গড়াচ্ছে
যুদ্ধ অনিবার্য
মজুদ রক্তদান শিবিরের প্রেসারকুকার
খবর ফুটছে

৮. 
অধিকার
ক্রিস্টাল উত্তর
পাহাড় শুষে নিচ্ছে
পায়ে পায়ে
চাকায় লাগছে প্রান্তিক মাটির মমতা
বুক চাপড়ে প্রশ্ন গিলছি
পথ বাড়ায় পৌঁছতে পারছি না

৯. 
অচেনা
খন্ডবিলাসিতা
তিনকন্যা এককন্যা দন্দ্ব সমাস
ছেলেমেয়ে জলচোরা কম্পিউটারভুক
গল্পের আঁশলাগা তৎকাল কপালে ছাইতিলক আঁকে
আপাদমস্তক মিথ্যে চুল
আমাকে বাসতে ভালো ভুলেছে

১০. 
অ্যাকোরিয়াম
ডিক্সনারি
হুঁশিয়ার  চায়ের জল কাঁপানো শব্দ
চুপ
আমার সব দোষ তোমাকে দিলাম জটেবুড়ি
ঐ মৎস্যনারী
ডিগবাজি খেতে খেতে জগৎ পেরিয়ে গেলাম