Thursday, January 14, 2021

শম্পা ব্যানার্জি-র ভ্রমণ-বাহিকতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  শম্পা ব্যানার্জি   
ভ্রমণ-বাহিকতা

বুদ্ধ যাত্রা (দ্বিতীয় পর্ব)

আমরা, শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে, দিলীপ কাকুর পরিবারকে, বিদায় জানিয়ে ট্যাক্সি করে এলাম হাওড়া স্টেশন। এইসময় দেখলাম, আমাদের সাথে রয়েছে নর দা। খুব আনন্দ হোলো। নর দা, হলেন  আমাদের রানাঘাটের নিস্তারিণী কালীমন্দিরের বড় পুরোহিতের ছেলে। আসলে, আমার এই গল্পের জট একটু একটু করে খুলবে, তখন জানা যাবে নর দা কেন আমাদের সঙ্গী হয়েছিলেন । নর দা আমার দাদার ক্লাসমেট তাই ছোট থেকেই চিনি। আমাদের থেকে অনেক বড়। খুব স্নেহ করতেন আর মজা করতেন। সবাইকে হাসাতেন। সবার সাথে মিশে যাওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিলো দাদার। 
আমাদের, রাতের ট্রেন। তাই সন্ধ্যের দিকে হাওড়া স্টেশনের রেল ক্যান্টিনে রাতের খাওয়া দাওয়া সারা হোলো। রাস্তায় আসার পথে হাওড়া ব্রীজ যখন পাড় হচ্ছি, মা বলছে এই মা গঙ্গার সাথে আবার দেখা হবে বেনারসে। যাইহোক, রাতের ট্রেনে উঠে পড়লাম আমরা। পরদিন সকালে গয়া নামবো। বাবা, বরাবর ভারত সেবাশ্রম সংঘের সঙ্গে যুক্ত। মেসোরাও তাই। তাই জানতে পারলাম আমরা আশ্রমেই থাকবো। আমার তো খুব আনন্দ। কারণ, স্বামীজিদের আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। শুধু তাই নয় বছরে একবার ওঁরা বেনারস থেকে যখন বাংলায় আসতেন, আমাদের ভাড়া বাড়িতেও আসতেন। আমার মনে আছে, স্বামীজিরা গোল করে আমাদের বসার ঘরে বসতেন। হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইতেন। আমাকে বসাতেন মাঝখানে একটা চেয়ারে। আমিও স্বামীজিদের সাথে গলা মিলিয়ে গাইতাম,

তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে॥
তব, পূণ্য-কিরণ দিয়ে যাক্, মোর মোহ-কালিমা ঘুচায়ে।

এ গানের মর্ম বোঝার সাধ্যি তখন আমার ছিলো না। আর আজ এ গানের মর্ম জীবনের প্রতি স্তরে অনুভব করি। স্বামীজিরা  আশীর্বাদ করে, বাবার থেকে অল্পবিস্তর চাঁদা নিয়ে চলে যেতেন। আমি, জানলার রড গুলো ধরে অনেক্ষণ ধরে যতদূর যায় ওঁদের চলে যাওয়া দেখতাম। পরবর্তীতে এ গান হয়ে উঠেছিলো আমার অভ্যাস। আমার হাইস্কুলের প্রার্থনা সঙ্গীত। আমার, এ গল্পের সাথে মিশে আছে সেইসব ফেলে আসা সোনা ঝরা দিন। ভরপুর আবেগ আর আনন্দ। আমি মিথ্যে গল্প সাজাতে পারিনা। তাই ফেলে আসা সত্যি গল্পের ইঁটগুলোকে, আবেগের সিমেন্ট দিয়ে গেঁথে চলেছি, যেন  একটা ভালোবাসার বাড়ি। তাই আজ যখন শ্রাবণী সেনের লাইভে ওঁর গলায় শুনছিলাম, "তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন মন রে আমার, আমার দু' চোখের পাতা ভিজে উঠছিলো। এক একটা গল্প যেন কোনো ঝড়ের রাতের দমকা বাতাস। ঝড় উঠেছে, মনের ঘরে আজ প্রবল ঝড় উঠেছে।



No comments: