----" চল, তোর বাড়িতেই যাই আজ।"
---" এই যে বললি,কার শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে যাবি !"
---" বলেছিলাম, এখন বলছি যাবো না। তোর কোনো অসুবিধা আছে?"
---" একেবারেই না। আমার আবার কিসের অসুবিধা!"
বিকাশের চোখ তখন লুকনো জলে চকচক করছে।আর সম্মোহ তার প্রিয় বন্ধুর হাতের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা ছড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে লিন্ডসে স্ট্রিটের মুখটাতে। আর ভাবছে একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা পৌঁছে যাবে বিকাশের বাড়ি। তারপর বিকাশের মন খারাপের অন্ধকারে সামান্য হলেও আলো জ্বালিয়ে দেবে সাধ্য মতো।
---" এতকিছু ঘটে গেল তুই একটা ফোন করলি না।"
---" তোর নম্বর জানতাম না।"
---" বাল। নম্বর জোগাড় করতিস! চেষ্টা করিস নি বল।"
---" না, করিনি! বিদ্ধস্ত হয়ে ছিলাম।
শেফালির মুখের দিকে তাকাতে পারতাম না। প্রথমে ও জানতো না রোগটা সম্পর্কে। তারপর একদিন জেনে গেল কিভাবে যেন। কিন্তু এই জেনে যাওয়াটা আমাকে বুঝতে দেয়নি। তখন আর কারো কথা মনে আসেনি। তোর কথাও মনে আসেনি। মন ওকে ছাড়া আর কাউকেই মনে জায়গা দেয়নি। "
---" তোর কষ্টটা অনুভব করছি! "
ট্যাক্সি শ্যামপুকুর স্ট্রিটে এসে থামল। সম্মোহ জোর করে ভাড়া মিটিয়ে ট্যাক্সি থেকে নেমে বিকাশদের বাড়ির গলিতে পা বাড়াল। শেফালি নেই। কিন্তু ওর আন্তরিক স্মৃতি যে ভোলবার নয়! মানুষ চলে যায় অথচ তার ওম্ ঘিরে থাকে!
সম্মোহ বিকাশের দেওয়া লুঙ্গি পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। দেওয়ালের এক পাশে শেফালির ছবি। অল্প বয়সের সদ্য বিয়ে হওয়া ছবি। সম্মোহ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকল। ভাবনার ঢেউ ভাসিয়ে দিলো সম্মোহকে।
---" সম্মোহদা এ্যাতো মদ খাও কেন? কি পাও ওসব ছাইপাশ খেয়ে?"
---" নেশা পাই! নেশা!"
---"একটা বিয়ে করো দিকি, মদের থেকেও বেশি নেশা পাবে! লীমাদিকে পাওনি! তাতে কি! দ্যাখো এখনো কেউ তোমার অপেক্ষায় আছো! এক পাখির ডাকে কখনো ভোর হয়! আরেক পাখিকেও ডাক দিতে হয়!"
---" আরে বিকাশ, শেফালি যে দার্শনিক হয়ে যাচ্ছে! "
বিকাশ হেসে ফেলে। সঙ্গে সম্মোহ।
---" কি খারাপ বলেছি! তোমরা হাসছো! " শেফালি অদ্ভূত স্বরে মুখ ভেঙচি দেয়।
সম্মোহ আবার হেসে ফেলে। বলে দিদিমণি এতদিন বাদে এলাম একটা জম্পেশ চাট বানিয়ে দাও!"
---" সে না হয় বানিয়ে দেব। কিন্তু কথা দাও দুটোর বেশি তিন পেগ হবে না!"
--- " আচ্ছা বাবা তাই হবে।প্রমিস। তবে তোমার বরের জন্য দুটো আমার জন্য একটা বেশি বরাদ্দ। অতিথি বলে কথা!"
----" হ্যাঁ বুঝেছি নারায়ণ! "
পুরনো দেওয়াল ঘড়ির শব্দে অন্যমনস্কতা কাটল। সময় যেন বলে দিল যাকে খুঁজছো সে নেই।তার না থাকার মধ্যেও সময়ের কাঁটা আছে। সেই কাঁটা যেন বিঁধিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তকে।
বিকাশ চা- বিস্কুট হাতে ঘরের ভেতরে এলো।সম্মোহকে বললো," নে, চা খা।"
----" খাচ্ছি। তোর?"
----" এই তো!"
---" কি ভাবছিস?"
----" স্মৃতি!"
---" মানুষ বুড়ো হলে স্মৃতিই ভাবে!"
----" ঠিকই বলেছিস। মানুষ বৃদ্ধ হলে স্মৃতিই ভাবে!"
---" বাড়িতে রান্নাবান্না কে করছে? লোক রেখেছিস?"
---" নারে লোক রাখার অনেক হ্যাপা। আমাদের পাড়ায় একজন ভদ্রমহিলা হোম ডেলিভারি শুরু করেছেন বছর খানেক হলো, ওনার থেকেই খাবার নিই। আর একটি আছে, সে ঘরদোর পরিস্কার করে বাসন মেজে দিয়ে যায়।"
---" ভাগ্যিস দেখা হলো বল। না হলে এত কিছু জানতেই পারতাম না।"
---" শোন আমার সঙ্গে কদিনের জন্য বাঁকুড়া চল। ঘুরে আসবি। আশাকরি তোর খারাপ লাগবে না।"
--" যাব রে!"
---" পরশু আমি ফিরব। আমার সঙ্গেই যাবি তুই। "
---" ঠিক আছে যাব।"
বিকাশ আপত্তি করলো না। সম্মোহ বিকাশকে জড়িয়ে ধরলো।





