Tuesday, December 16, 2025

প্রদীপ চক্রবর্তীর গদ্য | নিঃসঙ্গ ছায়ানটের শতবর্ষ

|| ব্ল্যাকহোল পত্রিকা || প্রদীপ  চক্রবর্তীর গদ্য

নিঃসঙ্গ ছায়ানটের শতবর্ষ [ পর্ব: ১]



(বিশেষ দ্রষ্টব্য --- সমকালীন সময়ের নিরিখে দাঁড়িয়ে, শ্রদ্ধেয় ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে এবং তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত এবং মুক্তিপ্রাপ্ত নয় এমন চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র, নাটক, ছোটগল্প নিয়ে আলোচনা করলে আমাদের আনখশিখর অস্তিত্ব নিয়েই আমরা সংকটে পড়ি। উত্তরাধিকারসূত্রে আমাদেরই ওপরে বর্তায় এই দায়। কারণ জীবিতঅবস্থায় আমরা ঋত্বিকের গভীর উপলব্ধি, দর্শন যেমন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিয়েছি, ভয়ে ও স্বভাব দোষে, যার ফলশ্রুতি  ধীরে ধীরে আত্মধ্বংসের প্রস্তুতি যার মূলে অনেকাংশে আমরাই দায়ী, তাকে অস্বীকার করার কোনো জায়গা আজ আর নেই। তাঁর জীবন ও মৃত্যু দুটো অর্ধ শতাব্দীর কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে। পঞ্চাশ বছরের স্বল্প জীবনের অনেকটা সময় জুড়ে দেশভাগ এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক শিকড়ে যে ক্ষয় ও পচন তা তাঁকে ভাবিয়েছে, তীব্র কষ্ট দিয়েছে। 
নীলকন্ঠের মতো একাই সেই গরল পান করে ধীরে ধীরে নিঃশেষিত হয়েছেন। নানাকরণবশত তাঁর প্রথম ছবি থেকে শেষ ছবি পর্যন্ত অনেক ছবিই ঠিক সময়ে মুক্তি পায় নি। তিনি অতিরিক্ত মদ্যপানে আসক্ত, অস্থিরচিত্ত, প্রথাভাঙা, অনুশাসনহীন, প্রতিবাদী, গড্ডলস্রোতে গা না ভাসানো, আনুগত্যকে তীব্র ভাবে অস্বীকার করেন বলেই বারংবার আমাদের তথাকথিত মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী সমাজের ভন্ডামি তাঁকে ব্যঙ্গ করেছে। কোনোও দিক থেকেই পেরে ওঠেনি বলেই, তাঁর জীবনে নানারকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তাঁর ক্ষমতাকে লঘু চোখে দেখে, এই শিক্ষিত হামবাগ বোনলেস চলচ্চিত্র সমালোচক, সমকালীন প্রভাবশালী পরিচালক বন্ধুরাও তাঁর পিঠে বারংবার ছুরি মারতে দ্বিধাবোধ করেনি। আর আজ শতবর্ষে দাঁড়িয়ে, অনেক স্মৃতি রোমন্থন, তাঁর ছবি দেখিয়ে, বই প্রকাশ করে, যে পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমরা করে চলেছি, তাতে একটুও আমাদের দূষিত কর্মফলের ভার কমে না। আমরা সেই বাঙালি আজও, যারা মৃত্যুর পর শ্রদ্ধেয় গুণীর চিতার পাশে সমাধিফলক রচনা করে, বড়ো বড়ো বাতেলা দিয়ে কাঁদুনি গাই, কিন্তু আমরাই জীবিত অবস্থায়, দিনের পর দিন, পরিকল্পিত চক্রান্তের মধ্য দিয়ে, সেইসব গুণীদের কোণঠাসা করি। তাঁর সবকিছু আশা স্বপ্নকে পিষে, দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে আত্মিক শান্তি পাই। স্রষ্টা ঋত্বিক, দ্রষ্টা ঋত্বিক এই বাঙালিদের হাড়ে হাড়ে  চিনতেন। এরফলে তাঁর সামনে কোনোও বঙ্গজ আঁতেল  সিনেমা নিয়ে বড়ো বড়ো কথা বললে, নিজের স্বকীয় ভাষার আভিজাত্যে তাদের প্রতিআক্রমণে দিশেহারা করে দিতেন। তিনি মনেপ্রাণে সাধারণ মানুষকে ভালবাসতেন, তাদের কথা ভেবেই ছবি করতেন এবং নিজের এই কমিটমেন্ট থেকে আমৃত্যু কখনোই সরে আসেন নি। হাজার প্রলোভনকে উপেক্ষা করেছেন। নিজের সৃষ্টির সততা এবং যাপনকে কখনোই আলাদা করেন নি। 
তাই ঋত্বিকের ছবির ক্যামেরা ও সম্পাদনা , তাঁর বিষয়ভাবনা, সিনেমার সঙ্গীতের প্রয়োগ যে গভীর বোধ ও চেতনঋদ্ধ অসীমতাকে তুলে ধরে, তাতে কেবল আমরা বিস্মিতই হই না, আমাদের বিবেক - বোধ - চেতনাকে এমনভাবে আঘাত করে, জাগ্রত করে, যে সেই অমোঘ নিষ্ঠুরতা আমাদের মনেই প্রতিপ্রশ্ন জাগায় জীবনানন্দের মতো -- 
"মধ্যবিত্তমদির জগতে আমরা/ বেদনাহীন-অন্তহীন বেদনার পথে।/ কিছু নেই- তবু এই জের টেনে খেলি; / সূর্যালোক প্রজ্ঞাময় মনে হ'লে হাসি;/জীবিত বা মৃত রমণীর মতো ভেবে-অন্ধকারে-/মহানগরীর মৃগনাভি ভালোবাসি।/তিমিরহননে তবু অগ্রসর হ'য়ে /আমরা কি তিমিরবিলাসী? / আমরা তো তিমিরবিনাশী হ'তে চাই।/ আমরা তো তিমিরবিনাশী।" )

আজকের বিষয় , 

প্রদীপ চক্রবর্তীর গদ্যে 

 ঋত্বিক ঘটকের প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছায়াচিত্র
                         "নাগরিক"


কালপুরুষ 
..................

রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতির ভূমিকায় বলেছেন- "স্মৃতির পটে জীবনের ছবি কে আঁকিয়া যায় জানি না। কিন্তু যেই আঁকুক সে ছবিই আঁকে। অর্থাৎ, যাহা কিছু ঘটিতেছে, তাহার অবিকল নকল রাখিবার জন্য সে তুলি হাতে বসিয়া নাই। সে আপনার অভিরুচি অনুসারে কত কী বাদ দেয় কত কী যে রাখে।... জীবনের স্মৃতি জীবনের ইতিহাস নহে- তাহা কোন এক অদৃশ্য চিত্রকরের স্বহস্তের রচনা।"-

বিভূতিভূষণের প্রায় সব লেখাতেই 'কালপুরুষের' প্রসঙ্গ আছে। ভারতীয় দর্শনে, উপনিষদে আছে যে কালপুরুষ যাকে ভর করে সে ঘরছাড়া হয়ে যায়, ভবঘুরে হয়ে ঘুরে বেড়ায়, কোথাও বাসা বাঁধতে পারে না। ভারতীয় চলচ্চিত্রে এই বিবাগী মানুষটি হলেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। আপসহীন , ঋজু এই মানুষটির জীবনদর্শন ও ভাবনায় যে নিরবচ্ছিন্ন নিরঙ্কুশ সততা এবং ভাবনার দেশজ শিকড়ের অতলান্ত আহ্বান, তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে বারংবার। সমস্ত জীবনভর এক অদৃশ্য শক্তি তাঁকে চালনা করেছে। এক অদৃশ্য স্রষ্টা তাঁকে দিয়ে এমন সব কাজের ইন্ধন জুগিয়েছে যে আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যে দাবানল আজ জ্বলার কথা, তা স্ফুলিঙ্গেই আত্মঘাতী হয়েছে। আসলে, ঋত্বিকের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব বাঙালী-মানসকে আন্দোলিত করেছে প্রবলভাবে। গড্ডল প্রবাহে অভ্যস্ত আমাদের জীবনকে একদিন শিকড় ধরে নাড়া দিয়ে নতুন জীবনের বার্তা শুনিয়েছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। স্বভাবে বোহেমিয়ানা প্রতিভার বিপুল স্ফুরণকে ক্ষণস্থায়ী করলেও প্রতিষ্ঠান-বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করল এক 'অন্য ধারা'।



গ্রীক পুরাকাহিনীর নায়ক প্রমিথ্যুসের মতোই নিজ জীবনে অসহ্য যন্ত্রণা বরণ করে নিয়েই গৌড়জনের জন্য মধুসূদন যে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ উপহার দিয়ে গেলেন মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঋত্বিককুমার ঘটক সেই আগুনের সফল উত্তরাধিকারী। অথচ এই ত্রয়ীর অভ্যন্তরীণ মিলনবিন্দুকে আজও কী আমরা সঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি?

Saturday, September 13, 2025

কবিতার ডালপালা | অরিজিৎ চক্রবর্তী

|| ব্ল্যাকহোল পত্রিকা ||

কবির সামাজিক ভূমিকা / অরিজিৎ চক্রবর্তী


পরিচিত বস্তুবিশ্ব বিশেষ করে জীববিশ্ব থেকে মানুষের নিত্যদিনের গল্পগুলি তাদের কুশীলব বেছে নেয়। পৌর্বাপর্যের ঢাল বরাবর কালপট বেয়ে এরা ধাবমান। অনুকৃতির আদর্শ মেনে কর্মরত কবি, এদের কান্না হাসির জটলা থেকে বেছে নেন প্রজনন-ক্ষম একটি অন্তঃসত্ত্বা মুহূর্ত! আমরা যারা পড়ছি এবং দেখছি আত্মীয়তা এবং শখ‍্যের দাবি মেনে নৈকট্যের একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে এদের সঙ্গে। অর্থাৎ অন্ধের বর্ণের মতো শব্দের আইকনোগ্ৰাফি আমাদের জানিয়ে দেয়,"মাটি থেকে গন্ধ ওঠে, গন্ধ মাখা রুটি / খেয়ে চলে হেতু আর অহেতু প্রকৃতি।"প্রসিদ্ধ জীববিজ্ঞানী ত‍্যেলর দ‍্য সাঁদা ( Teilhard de Chardin ) Phenomenon of Man গ্ৰন্থে Biosphere এর সঙ্গে Noosphere যোগ করেছেন। কবি রাহুল পুরকায়স্থ 'হেতু' আর 'অহেতু'-র Creative imagination -এ প্রত‍্যক্ষ ও পরোক্ষ উন্মিলীতাায় জানিয়ে দিলেন গাছ বাঁচলে মানুষ বাঁচে।

সবচেয়ে মুগ্ধ হই যখন দেখি স্হান ও কালের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে মিশিয়ে দেওয়া একটা ইচ্ছাকৃত বন্ধনমুক্ত রেখাহীন অস্পষ্টতা,যার আপাত কল্পলোকের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক স্পষ্ট জীবনবোধ‍্যতা, আমাকে আনত হতে বাধ্য করে।

"আহতকে প্রাণ
আমার জীবন আজও

উড়ন্ত বৃক্ষের
আজান আজান"

ক্লোরোফিলের শব্দরজ্ঞক নিয়ে কবি উড়ন্ত বৃক্ষের আজান ধ্বনির সম্প্রীতির উপনিষদ গড়ে তুললেন।সব রূপের অনিত‍্যতা যেমন স্পষ্ট হলো, তেমনি তাদের মূল ঐক‍্য ' বর্ণান্ অনেকান্ নিহিতার্থো দধাতি'। কবি প্রশ্ন রাখলেন, কোনটা সমাধান?"প্রলয়শরীর" নাকি "বিক্ষোভ,ভাসান"! কিংবা সেই তরু--"ঊর্ধ্বমূল অবাকশাখঃ এষোহশ্বথ্থঃ সনাতনঃ"---এর প্রতিধ্বনি।

কবিতার চেয়ে বিস্ময়কর পৃথিবীতে আর কিছুই নেই,থাকতে পারেনা।আর এই কবিতা বিচ্ছিন্ন কোন প্রতীতী নয়,সে সর্বোতোভাবে সমাজ ও সময় সম্পৃক্ত। তাই কবি রাহুল পুরকায়স্থ প্রণীত কাব‍্যলিপি "অন্ধের বর্ণনামতো" বইটির অনুভবী ক্রোম‍্যাটিসিটি ভাবনার আন্তরিক নৈকট্যবশত পাঠককে বলে দিতে পারে "আরও দূরে দূরাগত একা হেঁটে যায়"।

Tuesday, June 17, 2025

ষাটের যুবক | অনুরূপা পালচৌধুরী

|| ব্ল্যাকহোল পত্রিকা || ষাটের যুবক || পর্ব: ৪ ||



ষাটের যুবককে ৩য় চিঠিবাষ্পের সিন্দুক___

কল্যাণী থেকে 

         ৩য় চিঠির আস্তানায় আপাদমস্তক দুপুরটার রিংটোনে এখন আপনি অবসাদের কালবৈশাখী। অপেক্ষার ইমারতে এক একটা নূপুরের ফণায় গুনে ফেলছি নীলকণ্ঠ প্রজাপতির লোপাট বুকের শীতঝালর। 
ষাটের যুবক___ আপনাআপনি চোখ কেনো ভিজে ওঠে? জানি সে সুরম্য নদীতে আপনার দায়ভার নেই। দায় নেই মধ্যবিত্ত আমিটার অদ্ভুত আবদারচিহ্ন বাঁচাবার। না হয় একটু অন্ধকারের আরো ঘনিষ্ঠ জন্ম হোক। এ অন্ধকার আমার চিরকালীন অভ্যাসের দ্বার। দ্যাখো আঠাশের শিমূলতরবারি প্রসবহীনতায় সাতমহলা জিভের শিলমোহরে ডুবছে। প্রতিদিন নিজেকে ১বার করে পুড়িয়ে নেই আপনার রোমশ বুকের কাঁচাপাকা নিঃশ্বাসের প্রহরে। 

কথা ছিলো আসাযাওয়ার অমীমাংসিত রোদ্দুরের ছায়ায় আমার ঘরের অসুখে লেগে থাকা মাটির শীততাপে তোমার নিয়ন্ত্রিত সুখের পারদ। জানেনতো, এ শহরের অচেনা ডানায় প্রজাপতিসন্ধ্যা একান্তে জ্বলছে মৃতদেহের আড়ালে। মোচড়ানো আকাশের লালচে চোখে আমার স্বেচ্ছাচারী জীবাশ্ম শুধু তোমারই প্রশ্রয়। কতবার ভেবেছি মুখোমুখি টেবিলের ইতিহাসে পালটে দেবে তুমি এই শহরের গল্প। আজকাল চোখের ভারের চেয়ে বুকের ভার বেশী। সে ব্যাথারা কাঁদায় না। শুধু জল হয়ে গলে পড়ে দুরূহ সাদা অরণ্যের ভাঁজে। তবু আগামী দুপুরগুলো জন্ম দিই একান্ত আমার রক্তমাখা আঁতুঘুমের শরীরে। তবু কি আসবেন না আমার ভূপৃষ্ঠস্থ সূর্যসারির সমান্তরাল কবিতার তীব্র দেশান্তরে?
 
বি.দ্র. কাল দুপুরের আপেক্ষিক দক্ষিণা বাতাসের গভীরে আজকের সকাল পেড়িয়ে দুপুর। দুপুর প্রসূত সন্ধ্যা এখন রাতের অনুচর আর কাতারে কাতারে আমিটা সত্যি ভীষণরকম ভালো আছি। 
 

                      ইতি
       জন্মান্ধ কুয়াশার পুনর্জন্ম

Friday, June 13, 2025

পুরাণ থেকে প্রমাণের পথে : সরস্বতী নদী | সঞ্চারী ভট্টাচার্য

|| ব্ল্যাকহোল পত্রিকা ||  সঞ্চারী ভট্টাচার্য  || পর্ব: ৩
পুরাণ থেকে প্রমাণের পথে : সরস্বতী নদী 



নদী ও বাকের মধ্যে সরস্বতীর সংযোগ কোথা থেকে উদ্ভূত? 

ভারতীয় ধর্মতত্ত্বে দেবী সরস্বতী এক বহুমাত্রিক সত্তা, যার মধ্যে একত্রিত হয়েছে জলপ্রবাহ ও বাকপ্রবাহের দুই গূঢ় ধারা। প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে তিনি যেমন এক জীবন্ত নদীসরূপা দেবী, তেমনি বাণী ও জ্ঞানের আধিষ্ঠাত্রীশক্তি। এই দ্বৈত রূপ—নদী এবং বাক—সরস্বতীর মধ্যে কিভাবে মিলিত হয়েছে, তার ইতিহাস পুরাতন, গভীর এবং বহুস্তরীয়। এই সংযুক্তি কেবল একটি পৌরাণিক বিশ্বাস নয়, বরং ভারতীয় দর্শনের মধ্যে এক বিস্ময়কর প্রতীকি সূত্র। 

ঋগ্বেদের বহু মন্ত্রে সরস্বতীকে একাধারে দেবী, নদী ও মাতৃরূপে বন্দনা করা হয়েছে। “অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী”—এই মন্ত্রে তাঁর পরিচয় একত্র তিনটি রূপে। তিনি মা, তিনি নদী, তিনি দেবী। এখানেই ধরা পড়ে সেই সংযোগের সূচনা যেখানে প্রকৃতির জলরাশি হয়ে ওঠে উচ্চারণের অনুপ্রেরণা। সরস্বতীর জলপ্রবাহ শুধু ভূগোলের স্রোত নয়, তা মনের মধ্যেও বয়ে চলে ধ্বনিরূপে, বাকরূপে।

ঋগ্বেদে সরস্বতী নদীর সঙ্গে সঙ্গে 'প্রব্রাহ্মণী', 'চেতয়ন্তী সূনৃতানাং' ও ‘বোধয়ন্তী’ হিসেবে বর্ণিত। অর্থাৎ, তিনি যিনি চেতনার উদ্রেক করেন, বাকের প্রবাহ জাগিয়ে তোলেন। এইভাবে নদীর জলরাশি এক রূপক হয়ে ওঠে বাকপ্রবাহের—যেমন নদী প্রবাহিত হয় ভূমিতে, বাক প্রবাহিত হয় চেতনার ভূগর্ভে। তাঁর জলধারা যেমন বহন করে শস্যের উর্বরতা, তেমনি তাঁর বাকধারা বহন করে মনের উর্বরতা। 

এই ভাবনাটি আরও স্পষ্ট হয় উপনিষদীয় ও পুরাণীয় সাহিত্যে। ব্রহ্মার মুখ থেকে উৎপন্ন বাক যখন রূপ নিতে থাকে, তখন সেই বাক প্রতিমূর্ত হয় সরস্বতী হিসেবে। নদীর মতো যে বাক প্রবাহিত হয়, তা স্থবির নয়—চিরচঞ্চল, চিরজাগরুক। জল যেমন মৃত বস্তু নয়, তেমনি বাকও শুধুমাত্র ধ্বনি নয়; দুটোই প্রাণসম্পন্ন, প্রভাববিস্তারকারী ও রূপান্তরশীল। এই কারণে সরস্বতী কখনও কেবল নদী নন, আবার কেবল বাকও নন—তিনি এই দুইয়ের এক প্রাণময় যোগসূত্র। 

আরও গভীরভাবে দেখতে গেলে দেখা যায়, ঋষিরা যেভাবে নদীর ধারে বসে ধ্যান করতেন, সেই ধ্যানেই উঠে আসত ভেতরের বাক, অনুভব, শব্দ এবং পরিশেষে মন্ত্র। প্রকৃতির জলধারার মতো সেই ধ্বনিও ছিল শুদ্ধ, নিরবচ্ছিন্ন, অলৌকিক। এইভাবে সরস্বতী নদী থেকে দেবীতে রূপান্তরিত হন এবং বাকদেবী হিসেবে প্রতিষ্টা পান।

পৌরাণিক বর্ণনায় বলা হয়েছে, প্রজাপতি ব্রহ্মা যখন সৃষ্টির প্রথম ধ্বনি উচ্চারণ করতে চাইলেন, তখন সেই ধ্বনির আকৃতি রূপ নেয় সরস্বতী হিসেবে। তিনি নিজেই ব্রহ্মার বাক, সৃষ্টির মূল শব্দ। এই বাক নদীর মতো প্রবাহিত হয়ে জগতে প্রাণ সঞ্চার করে। জ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, যেমন জল ছাড়া শস্য জন্মায় না, তেমনি বাক ছাড়া চিন্তার জন্ম হয় না। এইভাবে সরস্বতী শুধু বহমান নদী নন, তিনি ভাবনারও নদী। 

ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিতে সরস্বতী শব্দের মূল অর্থই ‘স্রোতের অধিষ্ঠাত্রী’। ‘সারস’ ধাতু থেকে এসেছে ‘সরস্বতী’, যার অর্থ প্রবাহ, ছড়িয়ে পড়া, সঞ্চালন। এখানেই নদী ও বাকের মধ্যে প্রাকৃতিক মিল—দু'টিই প্রবাহমান, জাগ্রত এবং সৃষ্টিশীল। এই কারণে সরস্বতীর চিহ্ন নদী ও বাণী—দু'টিতেই একসঙ্গে ধরা পড়ে। তাঁর জল হল ভাবের জোয়ার, তাঁর বাক হল চেতনার স্রোত।

সময় যত এগিয়েছে, সরস্বতীর নদীসত্তা ধীরে ধীরে ভৌগোলিক মানচিত্র থেকে মুছে গেলেও তাঁর বাকসত্তা আরও বেশি করে স্থায়ী হয়েছে সংস্কৃতির ভিতরে। বেদের বাক হয়ে, পুরাণের দেবী হয়ে, উপনিষদের চেতনা হয়ে—তিনি রয়ে গেছেন। তাই সরস্বতী নদী ও বাক—এই দুই রূপেই সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, এবং এই দুইয়ের সংযোগই তাঁকে দেবী হিসেবে সর্বোচ্চ স্থানে স্থাপন করেছে। এই সংযোগ শুধু এক ঐতিহাসিক রূপান্তর নয়, বরং ভারতীয় ধর্মতত্ত্বে জ্ঞান, প্রকৃতি ও চেতনার এক পরম মিলনবিন্দু। 

নদী-সরস্বতী এবং বিদ্যা-সরস্বতীর মধ্যে মূল পার্থক্য কি ?

ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মতত্ত্বের অঙ্গনেই সরস্বতী দেবী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন। সরস্বতীকে নানা রূপে উপলব্ধি করা হয়। তার মধ্যে প্রধান দুটি রূপ হলো নদী-সরস্বতী এবং বিদ্যা-সরস্বতী। এই দুই রূপের মধ্যে প্রায়শই বিভ্রান্তি ঘটে, কারণ নাম এক হলেও তাদের প্রকৃতি, প্রতীক, কাজ ও অর্থভেদ ব্যাপক। নদী-সরস্বতী যেমন ছিল এক প্রাচীন, শারীরিক নদী, তেমনি বিদ্যা-সরস্বতী হলো আধ্যাত্মিক জ্ঞানের দেবী। এই প্রবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব নদী-সরস্বতী এবং বিদ্যা-সরস্বতীর মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি।

 প্রথমত, নদী-সরস্বতী প্রকৃতপক্ষে এক ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বাস্তবতা। প্রাচীনকাল থেকে ঋগ্বেদে সরস্বতী নদীর উল্লেখ পাওয়া যায়, যেখানে তাকে বিশাল জলধারা, জীবনের উৎস ও পবিত্র নদী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই নদী হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতীয় সমভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এক মহৎ নদী ছিল, যা বৈদিক জনসমাজের জন্য একটি অমূল্য জলাধার। নদী-সরস্বতী প্রকৃতির এক অংশ, যা মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এই নদীর পানি ছিল উর্বর জমির জীবনদায়ক, যা কৃষি, পরিবহণ, তীর্থ ও জীবনযাত্রার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করত। পুরাণ ও ইতিহাসে সরস্বতী নদীকে মায়াময়, নির্মল ও পবিত্র হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

 অন্যদিকে, বিদ্যা-সরস্বতী হলো একটি বিমূর্ত ও আধ্যাত্মিক রূপ। তিনি জ্ঞানের দেবী, ভাষার অধিষ্ঠাত্রী এবং সংস্কৃতি ও শিল্পের প্রেরণা। বিদ্যা-সরস্বতী মানুষকে চিন্তার আলো দেয়, তার বুদ্ধি ও মেধার বিকাশ ঘটায়। তাঁর আরাধনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়, কারণ তিনি বিদ্যা অর্জনে সহায়ক। বিদ্যা-সরস্বতীর রূপ কালো, সাদা বা হলুদ পোশাকধারিণী হিসেবে চিত্রিত হয়; হাতে থাকে বীণা, গ্রন্থ ও মুদ্রা। এই রূপে তিনি অশরীরী, মানবচেতনার অংশ, যার অস্তিত্ব মনের গভীরে এবং আধ্যাত্মিক জগতে নিহিত।

 দ্বিতীয়ত, নদী-সরস্বতীর ভূমিকা ছিল শারীরিক ও প্রাকৃতিক। তিনি পানির প্রবাহ, জীবনদানে সক্ষম এক প্রকৃতির উপহার। তার জল প্রকৃতিতে প্রাণ ফেরায়। সরস্বতী নদীর তীর্থ স্থানগুলি প্রাচীন থেকে পবিত্র ও আধ্যাত্মিক স্থান হিসেবে পরিচিত ছিল। মানুষ নদী-সরস্বতীর কাছে নিজেদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে জীবনের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করত। নদী-সরস্বতীর পানির স্রোত কৃষিজীবনকে সঞ্চালিত করে, জনজীবনে শীতলতা আনে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। নদী-সরস্বতীর স্রোত মানুষকে জীবনের মূর্ত উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয়।
 
অপরদিকে, বিদ্যা-সরস্বতীর কাজ হয় মনের গভীরে। তিনি মানুষের চিন্তা, জ্ঞান ও সৃষ্টিশীল শক্তির উৎস। বিদ্যা-সরস্বতীর আরাধনা মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও শিল্প-সৃষ্টির বিকাশ ঘটায়। তার আশীর্বাদ ছাড়া শিক্ষা অর্জন অসম্ভব। বিদ্যা-সরস্বতীকে বীণাবাজি ও সঙ্গীতের দেবী হিসেবেও গণ্য করা হয়, কারণ তিনি সৃজনশীলতা ও ভাষার শুদ্ধতার প্রতীক। তিনি মানুষকে সত্য ও জ্ঞানপথে পরিচালনা করেন, যার মাধ্যমে আত্মার মুক্তি সম্ভব।

তৃতীয়ত, নদী-সরস্বতীর অস্তিত্ব ছিল দৃশ্যমান ও দৈহিক। তিনি প্রকৃতিপ্রসূত জলপ্রবাহ, যা স্পর্শ ও দর্শনীয়। ঋগ্বেদের একাধিক স্তোত্রে সরস্বতী নদীকে প্রশংসা করা হয়েছে, তার বিস্তৃত জলধারা ও শক্তির কথা বলা হয়েছে। ইতিহাস ও পুরাণ অনুসারে, এই নদী উত্তর ভারতের প্রাচীন ভূখণ্ডে প্রবাহিত ছিল, কিন্তু বর্তমানে তার প্রকৃত রূপ বা স্রোত অনেকাংশে অদৃশ্য হয়ে গেছে। নদী-সরস্বতীর অস্তিত্ব লোকজ ও ধর্মীয় বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সংরক্ষিত হয়েছে। নদীর শারীরিক উপস্থিতি মানুষের জন্য শান্তি, পবিত্রতা ও জীবনের ধারক।

বিদ্যা-সরস্বতী অদৃশ্য, আধ্যাত্মিক ও বিমূর্ত। তিনি মনের গভীরে বাস করেন। বিদ্যার জ্যোতি তারই প্রকাশ। তিনি ব্যক্তির অন্তর্যামী, যার অস্তিত্ব শারীরিক নয়, বরং বুদ্ধি ও চেতনার আকাশে বিরাজমান। বিদ্যা-সরস্বতীর মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান আহরণ করে, কলা-কৌশলে পারদর্শী হয়। তাঁর অস্তিত্ব মনের আভা ও চিন্তার প্রবাহের মধ্যে নিহিত।

চতুর্থত, প্রতীক ও চিহ্নের দিক থেকে নদী-সরস্বতীকে জল, প্রবাহ, নদী ও নদীতীর দিয়ে বোঝানো হয়। তিনি প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক নদীর মতো এক বিস্তৃত স্রোত, যা জীবনধারা বহন করে। নদী-সরস্বতীকে অনেক সময় সাদা রঙের প্রবাহময় জলধারা হিসেবেও চিত্রিত করা হয়। এদিকে, বিদ্যা-সরস্বতীকে বীণা, গ্রন্থ ও সাদা পোশাক পরিহিত দেবী হিসেবে দেখা হয়। তিনি বুদ্ধি, ভাষা ও শিল্পের দেবী, যিনি মানুষের জ্ঞানচেতনার আলো জ্বালান।

পঞ্চমত, ধর্মগ্রন্থে নদী-সরস্বতীর উল্লেখ ঋগ্বেদ ও পুরাণে পাওয়া যায়। ঋগ্বেদের অনেক মন্ত্রে সরস্বতী নদীর গৌরব ও শক্তি বর্ণিত হয়েছে। পুরাণেও নদী-সরস্বতীকে ভূমির পবিত্র স্রোত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যা-সরস্বতী সম্পর্কে বেশি তথ্য পাওয়া যায় উপনিষদ ও বেদান্তে, যেখানে তিনি বিশ্ববাকেরূপে পরিচিত। এই সমস্ত শাস্ত্র সরস্বতী দেবীর ভিন্ন দিক তুলে ধরে, যা দর্শনের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

সারসংক্ষেপে, নদী-সরস্বতী হলো প্রকৃতির এক প্রাণবন্ত নদী, যিনি জীবন-জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি আমাদের দৈহিক ও প্রাকৃতিক পৃথিবীর অংশ। আর বিদ্যা-সরস্বতী হলো মানব মনের আভ্যন্তরীণ দেবী, যিনি বিদ্যা, বাণী ও সৃষ্টিশীলতার প্রেরণা। নদী-সরস্বতী যেমন জীবনের উৎস, তেমনি বিদ্যা-সরস্বতী জ্ঞানের আলো। দু’টি রূপ আলাদা হলেও তারা একে অপরের পরিপূরক। একত্রে তারা ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি।

 এইভাবে আমরা দেখতে পাই, সরস্বতী দেবীর নদী ও বিদ্যার রূপের মধ্যে পার্থক্য মূলত তাদের প্রকৃতি, কাজ ও অস্তিত্বের ক্ষেত্রের ভিত্তিতে। নদী-সরস্বতী আমাদের জীবনের দৈহিক দিককে উর্বর করে, আর বিদ্যা-সরস্বতী মন ও বুদ্ধির দিককে আলোকিত করে। দুই রূপ একসাথে ভারতীয় চেতনার গভীরতা ও বৈচিত্র্যকে প্রকাশ করে।

 
তথ্যসূত্র –

১. ভারতের হারিয়ে যাওয়া নদী ও সভ্যতা – সুধাংশু সরকার, ২০১০
২. সরস্বতী নদীর অজানা কাহিনি – প্রবীর ঘোষ, ২০১২
৩. ভারতের প্রাচীন জলপথ: সরস্বতী – হিরণ্ময় বসু, ২০১১
৪. সরস্বতী নদীর ইতিহাস ও সংস্কৃতি – রাকেশ শর্মা, ২০১৩
৫. ভারতীয় সংস্কৃতিতে নদীর ভূমিকা – অঞ্জনা মিত্র, ২০১৪

Tuesday, June 10, 2025

ষাটের যুবক | অনুরূপা পালচৌধুরী

|| ব্ল্যাকহোল পত্রিকা ||  ষাটের যুবক || পর্ব: ৩ ||



রাণাঘাট থেকে 

গভীর দুপুরে আমার ষাটের যুবককে লেখা ২য় চিঠিবাসর।

ষাটের যুবক___

                     ১ম বাসর খামবন্দী রেখেই ২য় বাসরের অপেক্ষা না করে যুবকজ্বরের অন্তিমশয্যায় ১খানা খানাখন্দের ঘর জমা রাখলাম। অজুহাতের শরীর ছিন্ন করে হাজার ভীরে আমার চোখের দালান অস্পষ্ট হয় নীলকণ্ঠ প্রজাপতির হাড়গোড়ের  উপত্যকায়। তুমি কি বুঝেছিলে অবসাদহীন মেঝের ফাপা শূন্যতাবোধে নিষিদ্ধ মোমজামার বরাদ্দ আগুনের সলতেটাকে? এ যাবৎকাল দেখা হবে কিনা জানি না। যদি দেখা হয় শুধু হাতের কেলভিনে জমানো কিছু উষ্ণ পালকের গঙ্গা বইয়ে দিতে চাই।

আমার ষাটের যুবক! আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে বহু দেখেছি আর ভেবেছি এ আমার সর্ব কালের যুবাপুরুষ।আমার ঘরভরা বসন্তের সংসার। হাতাখুন্তির টুংটাঙে আমার ছন্দহীন অক্ষরের অন্তর্বাসে আপনিটা বড্ড তুমি পাগল হয়ে ওঠে যখনতখন। আপনার ১টা পোস্টে দোকানঘরের শেয়ার মার্কেট,দালাল,ধোঁয়া ওঠা ভাঁড়ের স্টেশন চত্বর, গুঁড়ো বিস্কুটের সোদা প্রসূতি হাসপাতাল থেকে শুরু করে কুমারী মায়ের নষ্ট ভ্রূণ,বেশ্যার রোমাঞ্চিত প্রিপেইড ঘন লাশ আর অন্ধকার গলির আমিতে বড্ড লড়াই চলে।হাজার লাইক, শেয়ারের স্রোতে ভাসতে ভাসতে শীতবস্ত্রের সশস্ত্র পাহাড়ায় আপনার সাদা পাজামার সখে ঘুরপাক খায় আমার আঠাশ বসন্তের মাছভাত।

ষাটের যুবক....দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে? সৌভাগ্যের দরজায় এখন আর লেবুলঙ্কার আচার শুকাই না। আগামীর দুপুরঘন ছাদটা বন্দক দিলাম। বিনিময়ে সাথে থাকার লোভে হাইতোলা আঁচলের প্রতিশ্রুত উদ্বেগের মজ্জাঘড়ির দূরস্থ সময়। ষাট বাষ্পের বাষ্পীয়রথের শুকনো গোলাপ এখনো জমা পড়ে আছে কোন ১ অংক খাতার শেষ পাতায়। আগামী ৩০ বসন্তের গচ্ছিত গোলাপি শহরে আমাদের বেপরোয়া পতাকাপথ হেঁটে যাবে বিজয় উল্লাসে।মনে পড়ে, বাবা কেজিদরে পুরনো খাতা বিক্রি করলে আমার ভীষণ কষ্ট হতো। কিন্তু নতুন কাগজের গন্ধ অভিলাষী অভুক্ত সুখে সে দুঃখ ভুলে যেতাম। সে গন্ধধ্বনি বরাবরই আমার বড় প্রিয়। সে প্রিয়তার প্রথম কবিতা মানসী হোচট খেতে খেতে এখন ঘন ভাতের দাবী অবশ্য করে না।তবে আপনার আসার অপেক্ষায় প্রতিদিন একটু একটু করে রোদআলতায় পা বুলায়।

অবশেষে বলি, অগোছালো আয়নার আয়ুঘরে ধারাবাহিক চুমু খেলেও এ শহরের নির্ঘুম বেহালা শিহরিত হয় না।    

                               ইতি

                 জন্মান্ধ কুয়াশার পুনর্জন্ম।